যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে প্রায় ১০০ পণ্যে শুল্ক প্রত্যাহারের চিন্তা সরকারের

প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান শুল্কহার সংক্রান্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বাণিজ্য সহজীকরণ ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার প্রায় ১০০টি পণ্যে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করছে।

প্রস্তাবিত তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ, তৈরি পোশাক শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল, ম্যান-মেড ফাইবার, উল, বর্জ্যপানি শোধনাগার (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট), ডায়ালাইসিস ফিল্টার, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র এবং কিছু নির্দিষ্ট ধরনের অস্ত্র। বর্তমানে এসব পণ্যে সর্বোচ্চ ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপিত রয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণার আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

এনবিআরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমরা ১৬১টি ট্যারিফ লাইন চিহ্নিত করেছি, যেগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হতে পারে। এর মধ্যে ১০০টির ওপর থেকে আমদানি শুল্ক পুরোপুরি তুলে নেওয়া হতে পারে।”

তিনি আরও জানান, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়ম অনুযায়ী, এই শুল্ক প্রত্যাহার কেবল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রযোজ্য হবে না, বরং তা সব দেশের জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়বে বলেই সরকার আশাবাদী।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রস্তাবিত ১৬১টি পণ্যের মোট আমদানি মূল্য ছিল প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা, যেখানে সরকার রাজস্ব হিসেবে পেয়েছে প্রায় ৬১০ কোটি টাকা। কর্মকর্তাদের মতে, এই শুল্ক প্রত্যাহারের ফলে রাজস্ব ঘাটতি খুব বেশি হবে না। বরং এতে আমদানি বাড়বে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস পাবে।

উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের ২ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন এক নির্দেশনার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করে, যার আওতায় বাংলাদেশের কিছু পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হয়। এর আগে গড় শুল্কহার ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ। পরে যুক্তরাষ্ট্র ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল রেখে অতিরিক্ত শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ প্রায় ২.২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, আর রপ্তানি করেছে ৮.৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। ফলে যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রপ্তানি বাজারে পরিণত হয়েছে।

বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশাধিকারে সহজতা আনতে চলমান আলোচনার অংশ হিসেবে আমদানি শুল্ক কমানোর এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।