যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, শুল্ক হার কমে হচ্ছে ১৫ শতাংশ

প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে ১ আগস্টের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই। এই চুক্তির ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশের পরিবর্তে মাত্র ১৫ শতাংশ শুল্ক দেবে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এটি ছিল ষষ্ঠ কাঠামোগত বাণিজ্য চুক্তি। এ ছাড়া আরও ২৪টি দেশকে যুক্তরাষ্ট্র চিঠি দিয়ে জানিয়েছে যে, ১ আগস্ট থেকে তাদের নতুন শুল্ক হার কার্যকর হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হওয়ার্ড লাটনিক ঘোষণা দিয়েছেন, ১ আগস্টের সময়সীমা আর বাড়ানো হবে না। যেসব দেশের সঙ্গে এখনো চুক্তি হয়নি, তাদের নতুন হারে পাল্টা শুল্ক দিতে হবে। ফক্স নিউজ সানডেতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “শুল্ক বিভাগ ওইদিন থেকেই নতুন হারে আদায় শুরু করবে, তারপর যা হওয়ার তাই হবে।” এর আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৯ জুলাইয়ের সময়সীমা বাড়িয়ে ১ আগস্ট করেছিলেন, কিন্তু এবার আর বাড়ানো হবে না।

চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য, জাপান, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেছে। পাশাপাশি ট্রাম্প ছোট দেশগুলোর ওপর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, এই চুক্তিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কাঠামোয় গভীর প্রভাব ফেলবে।

ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর অর্থনীতির অধ্যাপক স্টিভেন ডারলফ বলেন, চুক্তিগুলো ছোটখাটো পরিবর্তন নয়, বরং তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির পথকে জটিল করে তুলবে। যদিও এখনো শুল্কের পূর্ণ প্রভাব বাজারে পড়েনি, কারণ অনেক প্রতিষ্ঠান আগেই পণ্য মজুত করেছে। তবে আগামী দিনে মূল্যস্ফীতি বাড়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে গড় কার্যকর শুল্কহার ১৬.৬ শতাংশ, যা ১ আগস্ট থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ২০.৬ শতাংশে। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ল্যাবের তথ্যমতে, এই বৃদ্ধির ফলে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়বে এবং প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হবে। বিবিবিএ রিসার্চ বলছে, বর্তমান শুল্ক হারেই বৈশ্বিক জিডিপি স্বল্পমেয়াদে ০.৫ শতাংশ ও মধ্যমেয়াদে ২ শতাংশ কমে যেতে পারে।

ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ বার্নার্ড হোকম্যান বলছেন, শুল্ক বৃদ্ধির আগে অনেক দেশ আগেই পণ্য পাঠিয়ে দিয়েছে, যার কারণে এখনো যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির চাপ দেখা যায়নি। তবে গড় শুল্ক হার যদি ২০ থেকে ৩০ শতাংশে পৌঁছে, তাহলে বিশ্ববাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়বে।

ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসন অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, ইতিবাচক অর্থনৈতিক সূচকগুলো প্রমাণ করে যে এসব পূর্বাভাস সঠিক নয়। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, বাজার এখনো ট্রাম্পের ঘোষণা গুরুত্বসহকারে নেয়নি। সেজন্যই যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি। তবে যদি আবার সময়সীমা বাড়ানো হয়, তবে ট্রাম্পের অবস্থান বাজারের কাছে দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

শেষ পর্যন্ত, যেসব দেশকে যুক্তরাষ্ট্র চিঠি পাঠিয়ে নতুন শুল্ক হার জানিয়ে দিয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে—
ব্রাজিল (৫০%), মিয়ানমার (৪০%), লাওস (৪০%), কম্বোডিয়া (৩৬%), থাইল্যান্ড (৩৬%), বাংলাদেশ (৩৫%), কানাডা (৩৫%), সার্বিয়া (৩৫%), ইন্দোনেশিয়া (৩২%), আলজেরিয়া (৩০%), বসনিয়া ও হার্জেগোভেনিয়া (৩০%), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (৩০%), ইরাক (৩০%), লিবিয়া (৩০%), মেক্সিকো (৩০%), দক্ষিণ আফ্রিকা (৩০%), শ্রীলঙ্কা (৩০%), ব্রুনেই (২৫%), মলডোভা (২৫%), জাপান (২৫%), কাজাখস্তান (২৫%), মালয়েশিয়া (২৫%), দক্ষিণ কোরিয়া (২৫%), তিউনিসিয়া (২৫%) এবং ফিলিপাইন (২০%)।