
প্রতিবেদক: বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমানোর বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ। ওয়াশিংটনের ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর) কার্যালয়ে মঙ্গলবার (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১২টা) শুরু হওয়া এই আলোচনা চলে ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা জানিয়েছেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল এই আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। আলোচনায় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান ও অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী রয়েছেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান ঢাকায় অবস্থান করলেও অনলাইনে যুক্ত হন।
এই তিন দিনের আলোচনা ৩১ জুলাই পর্যন্ত চলবে এবং প্রতিনিধি দলের ৩ আগস্ট ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।
আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে রপ্তানিকারকেরা গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে পণ্য পাঠান, ফলে নতুন হার কার্যকর হলে তা ৫০ শতাংশে দাঁড়াবে। এর আগেও দুই দফা আলোচনা হলেও কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল বিশ্বের ৬০টি দেশের জন্য পাল্টা শুল্কের ঘোষণা দেন, যার মধ্যে বাংলাদেশের জন্য হার ছিল ৩৭ শতাংশ। বাংলাদেশ দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ৭ এপ্রিল দুটি চিঠি পাঠালে যুক্তরাষ্ট্র ৯ এপ্রিল তিন মাসের জন্য এ সিদ্ধান্ত স্থগিত করে। পরবর্তী ঘোষণা আসে ৮ জুলাই—বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্ক হার নির্ধারিত হয় ৩৫ শতাংশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে ৮৭৬ কোটি ডলারের পণ্য এবং আমদানি করেছে প্রায় ২৫০ কোটি ডলারের পণ্য। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ৬২৬ কোটি ডলার।
এই ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ সরকারি পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম, এলএনজি ও ২৫টি বোয়িং উড়োজাহাজ কিনছে। বেসরকারি পর্যায়ে তুলা, সয়াবিনবীজসহ আরও কিছু পণ্য আমদানির পরিকল্পনাও রয়েছে, যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসায়ী পর্যায়ের আলোচনাও চলছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, এলএনজির দাম কমায় আমদানি আরও বাড়ানো হতে পারে। তবে তা দরপত্রের মাধ্যমে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাংবাদিকরা শুল্ক ইস্যুতে কথা বলেন। বোয়িং থেকে উড়োজাহাজ কেনার খরচ বা যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনা হবে কিনা—এই বিষয়ে তিনি সুনির্দিষ্টভাবে মন্তব্য না করলেও বলেন, “ওই পুরো প্যাকেজ নিয়েই গেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। কী কী কিনতে হবে, তা তিনিই বলতে পারবেন।
সরকারের আশা, চলমান আলোচনায় ইতিবাচক ফল মিলবে এবং বাংলাদেশের রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কহার হ্রাস পাবে।