
প্রতিবেদক: অনেকটা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক কমে ৩৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি প্রতিযোগী দেশ চীন ও ভারতের তুলনায় কম। ফলে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।
তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানিকারকেরা জানান, পাল্টা শুল্ক থাকলেও এখন তা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বেড়েছে। চীনের ওপর উচ্চ শুল্ক থাকায় সেখানে উৎপাদন কমে যাবে, ফলে সেখান থেকে সরে আসা অনেক ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে আসতে পারে। ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক থাকায় এই সুযোগ আরও বড় হতে পারে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে চীনা রপ্তানিকারকেরা আগ্রাসী হয়ে উঠলে বাংলাদেশ সেখানে নতুন প্রতিযোগিতায় পড়তে পারে।
এই পাল্টা শুল্ক কার্যকরের ঠিক আগে, গত ৩১ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের ওপর চূড়ান্ত শুল্কহার ঘোষণা করেন। এতে বাংলাদেশের পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয় এবং কার্যকারিতা সময়সীমা বাড়িয়ে ৭ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়।
বাংলাদেশি পণ্যের অন্যতম বড় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এশিয়ান-ডাফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুস সালাম বলেন, “পাল্টা শুল্ক কমে ২০ শতাংশ হওয়াটা বিশাল স্বস্তির খবর। এতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে সমতায় দাঁড়িয়ে আমরা মার্কিন বাজারে টিকে থাকতে পারব।”
চট্টগ্রামের আরেক প্রতিষ্ঠান ইনডিপেনডেন্ট অ্যাপারেলসের এমডি এস এম আবু তৈয়ব বলেন, “শুল্ক হার কমেছে ঠিকই, কিন্তু আমাদের অভ্যন্তরীণ খরচ কমাতে হবে। এই সময়ে যেখানে খরচ কমানো দরকার, সেখানে বন্দরের মাশুল ও বেসরকারি ডিপোর চার্জ বাড়ানো হচ্ছে, যা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার পথে বাধা।”
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় একক রপ্তানি বাজার। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৮৬৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে ৭৫৪ কোটি ডলারই তৈরি পোশাক। এটি দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ শতাংশের বেশি।
চীন দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষস্থানে রয়েছে। তবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে শুরু হওয়া বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে চীনের রপ্তানি কমতে থাকে। এবার তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ পুনরায় জোরালো হয়েছে, ফলে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো এখন অন্য বিকল্প খুঁজছে।
স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির এমডি শোভন ইসলাম বলেন, “আমরা ভালো অবস্থানে আছি। চীনের অর্ডার সরবে, সেটা আমাদের জন্য সুযোগ। তবে এই সুযোগ কাজে লাগাতে সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং সরকারকেও সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে।”
বর্তমানে মার্কিন বাজারে শীর্ষ ১০ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে: ভিয়েতনাম, চীন, বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও কোরিয়া। ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্কহার অনুযায়ী, চীনা পণ্যে ৩০ শতাংশ, ভারতীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের পণ্যে ২০ শতাংশ, এবং কোরীয় পণ্যে ১৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক জানান, “শুল্ক কমায় নিঃসন্দেহে স্বস্তির জায়গা তৈরি হয়েছে। তবে অস্থায়ীভাবে ক্রয়াদেশ কিছুটা কমে যেতে পারে। এই সময়ে ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলো যেন ক্ষতির মুখে না পড়ে, সেদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে।”