যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে বেড়েছে

অনলাইন ডেক্স: যুক্তরাষ্ট্রের অনুকূল শুল্ক নীতির ফলে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশটি থেকে প্রচুর কার্যাদেশ আসার ফলে এই প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ এ সময়ে পোশাক রপ্তানিতে এগিয়ে ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (ওটেক্সা)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭৯৯.৬৫ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৫.৯৩ শতাংশ বেশি।

রপ্তানিকারকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আগের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর ফলে বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানির জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছিল, যা চীনের বাজার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার একটি কারণ।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ১৫.৬২ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলেও বাজারে প্রবৃদ্ধির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি ছিল ৭.২০ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৯.৪৬ শতাংশ বেশি।

বিভিন্ন দেশের রপ্তানির তুলনামূলক চিত্র:

  • বাংলাদেশ: ৪৫.৯৩% বৃদ্ধি (৭৯৯.৬৫ মিলিয়ন ডলার)
  • চীন: ১৩.৭২% বৃদ্ধি (১.৬০ বিলিয়ন ডলার)
  • ভিয়েতনাম: ১৯.৯০% বৃদ্ধি (১.৪৪ বিলিয়ন ডলার)
  • ভারত: ৩৩.৬৪% বৃদ্ধি (৪৭৩.২৭ মিলিয়ন ডলার)
  • ইন্দোনেশিয়া: ৪১.৭০% বৃদ্ধি (৪১৯.৯৫ মিলিয়ন ডলার)
  • কম্বোডিয়া: ২৯.৯৫% বৃদ্ধি (৩২৪.৯৯ মিলিয়ন ডলার)
  • মেক্সিকো: ১.২০% বৃদ্ধি (১৯৩.৭০ মিলিয়ন ডলার)
  • পাকিস্তান: ১৭.৫০% বৃদ্ধি (১৭৯.৭৩ মিলিয়ন ডলার)
  • দক্ষিণ কোরিয়া: ৫.৫৪% বৃদ্ধি (১৬.৪৩ মিলিয়ন ডলার)
  • হন্ডুরাস: ২৬.১০% হ্রাস (১১২.০২ মিলিয়ন ডলার)

বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ২৬.৮০ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ২৪.২২ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ১০.৬৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

বিভিন্ন সেগমেন্টে প্রবৃদ্ধি:

  • ওভেন পোশাক: ১০.২২% বৃদ্ধি (১১.৩০ বিলিয়ন ডলার থেকে ১২.৪৬ বিলিয়ন ডলার)
  • নিটওয়্যার: ১১.০১% বৃদ্ধি (১২.৯২ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৪.৩৪ বিলিয়ন ডলার)

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, এই প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের টেকসই ও অব্যাহত অর্থনৈতিক অগ্রগতির ইঙ্গিত দেয়।

যদিও সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক, তবে কিছু চ্যালেঞ্জও দেখা যাচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির পর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানিতে মন্দা দেখা গেছে।

  • ফেব্রুয়ারিতে পোশাক রপ্তানি ছিল ৩.২৪ বিলিয়ন ডলার, যা মাত্র ১.৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
  • ওভেন রপ্তানি: ০.৪৪% হ্রাস
  • নিটওয়্যার রপ্তানি: ৩.৭৭% বৃদ্ধি

ফারুক হাসান বলেন, আমরা যখন এসব অর্জন উদযাপন করছি, তখন মাসভিত্তিক বিশ্লেষণে কিছু চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিতও পাচ্ছি। ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার পাশাপাশি সংকটও রয়েছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের শিল্পখাতের জন্য একটি ইতিবাচক দিক। বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধি, প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সুবিধাজনক শুল্কনীতি এবং উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ এই অগ্রগতি ধরে রাখতে পারবে বলে আশা করা যায়। তবে বাজারের বর্তমান মন্দার পূর্বাভাস এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিস্থিতির পরিবর্তনের ওপর বিশেষ নজর রাখতে হবে।