
প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘটনায় দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা বিষয়টিকে একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন, অন্যদিকে এটিকে রপ্তানি বাজারে বৈচিত্র্য আনার একটি সুযোগ বলেও বিবেচনা করছেন। সংশোধিত কর হার বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভিয়েতনামের মতো প্রতিযোগীদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার ক্ষেত্রেও সহায়ক হতে পারে বলে তাঁদের মত। তবে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে—বিশেষ করে ক্রেতাদের চাপে পড়ে দাম কমাতে হতে পারে, এতে রপ্তানিকারকদের মুনাফা আরও সংকুচিত হতে পারে।
মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসনের সময় বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের প্রস্তাব এসেছিল, যা বিদ্যমান গড় ১৬ শতাংশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সাম্প্রতিক আলোচনার পর এই হার কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হলেও বিভিন্ন পণ্যে কার্যকর হার ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ বলেন, ভারতের ওপর উচ্চতর শুল্ক আরোপের ফলে কিছু মার্কিন কার্যাদেশ বাংলাদেশের দিকে আসতে পারে, তবে শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ক্রেতাদের দাম কমানোর চাপ বাড়তে পারে।
তিনি আরও বলেন, মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগী ভিয়েতনামের ওপর একই ধরনের শুল্ক থাকলেও কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়া তুলনামূলক কম শুল্ক পায়, যা বাংলাদেশকে কিছুটা অসুবিধায় ফেলতে পারে। তাই শুল্ক হার আরও কমাতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনার সুযোগ আছে এবং ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, বড় প্রতিষ্ঠানগুলো হয়তো টিকে থাকতে পারবে, কিন্তু ছোট ও মাঝারি রপ্তানিকারকরা মার্কিন ক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষির চাপে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাবে পণ্যের দাম বেড়ে গেলে আমদানি হ্রাস পেতে পারে, ফলে কার্যাদেশও কমে আসবে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিমের মতে, এই নতুন শুল্ক ব্যবস্থা একটি ‘অনুঘটক’ হিসেবে কাজ করে বাজারে পণ্যের বৈচিত্র্য আনার সুযোগ তৈরি করেছে। একই সঙ্গে টেকসই ও উচ্চমানের পোশাক উৎপাদনের দিকে নজর দিতে হবে। দক্ষতা, প্রযুক্তি ও নকশায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, যাতে আন্তর্জাতিক বাজারে অবস্থান সুদৃঢ় হয়।
এদিকে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী এই শুল্ক ব্যবস্থাকে ব্যবসা এবং বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেন। তাঁর ভাষায়, “আমরা এমনিতেই কম মুনাফায় পণ্য রপ্তানি করি, এখন বাড়তি শুল্কের বোঝা বহন করা আরও কঠিন।” তিনি বলেন, “শুল্কের বোঝা শেষ পর্যন্ত মার্কিন মধ্যবিত্তদের ওপর পড়বে, যা তাদের জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব ফেলবে।”
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের মার্কিন ক্রেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে, উত্পাদন খরচ কমাতে হবে এবং সেবার মান বাড়িয়ে দৃঢ় ও নির্ভরযোগ্য সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
সবমিলিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতিকে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন উদ্বেগ বাড়ছে, তেমনি নতুন প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। এর যথাযথ ব্যবস্থাপনা এবং কৌশল নির্ধারণের ওপরই নির্ভর করছে বাংলাদেশি রপ্তানির ভবিষ্যৎ।