
প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই দেশটির সঙ্গে চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করেছে। এর ফলে অনেক আমেরিকান ক্রেতা প্রতিষ্ঠান চীন থেকে পণ্য সরিয়ে নিচ্ছে, যার সুফল কিছুটা পাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে চামড়া, চামড়াবিহীন জুতা ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আদেশ বাড়ছে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে এই খাতে রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে, যা দেশের রপ্তানি খাতের জন্য ইতিবাচক একটি ইঙ্গিত।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, তা কার্যকর হলে চামড়াজাত পণ্য খাত ভয়াবহ চাপে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা। এই খাত তৈরি পোশাকের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক খাত। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকেরা গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে পণ্য রপ্তানি করছেন। নতুন পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে প্রতিযোগিতার বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে।
রপ্তানিকারকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের চামড়া ও জুতাশিল্পের সবচেয়ে বড় বাজার। এককভাবে চামড়ার জুতা রপ্তানির ৪৩ শতাংশই যায় যুক্তরাষ্ট্রে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৬৭ কোটি ডলারের চামড়ার জুতা রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় সাড়ে ২৩ শতাংশ বেশি। চামড়াবিহীন জুতার রপ্তানিতেও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫১ শতাংশ। তবে উচ্চ শুল্কের কারণে এই প্রবৃদ্ধি দীর্ঘস্থায়ী না-ও হতে পারে।
এই সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে তৃতীয় দফায় শুল্ক আলোচনায় বসেছে বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল। তারা মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। আলোচনা সফল না হলে মার্কিন বাজারে প্রবেশাধিকার হারানোর পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারেও চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা আরও কঠিন হয়ে যাবে।
এনপলি গ্রুপ ও এসেন্সর ফুটওয়্যারের মতো বড় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোও উদ্বিগ্ন। এনপলি গ্রুপের এমডি রিয়াদ মাহমুদ জানিয়েছেন, নতুন মার্কিন ক্রেতারা আগ্রহী হলেও শুল্কের কারণে এখন তারা নীরব। অন্যদিকে এসেন্সরের এমডি কে এম মুশফিকুর রহমান বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ৯০ শতাংশ রপ্তানি হলেও উচ্চ শুল্ক থাকলে এই ক্রেতারা বিকল্প বাজার খুঁজে নিতে পারে।
অন্যদিকে, চামড়াজাত পণ্যের সামগ্রিক রপ্তানিতে সামান্য পতন ঘটেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই খাতে রপ্তানি হয়েছে ৩৪ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২.২১ শতাংশ কম। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৯ কোটি ডলারের চামড়াজাত পণ্য, আর বাকি অংশ ভারতে, জাপানে ও বেলজিয়ামে গেছে। মার্কিন বাজারের ওপর নির্ভরশীল এই খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে শুল্ক কমানোর বিষয়ে রাজনৈতিক কূটনীতিকে গুরুত্ব দিতে হবে—এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।