যুক্তরাষ্ট্র–চীন বাণিজ্যচুক্তি: বিরল খনিজ রপ্তানি খুলছে, শিক্ষার্থীদের জন্য ছাড়

প্রতিবেদক: চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ প্রশমনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একটি নতুন বাণিজ্যচুক্তিতে সই করেছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বৃহস্পতিবার রাতে হোয়াইট হাউসের এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন,

আমরা কিছুদিন আগেই চীনের সঙ্গে চুক্তি সই করেছি।

তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি। খবর আল–জাজিরার।

হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানান, এই চুক্তি মূলত ‘জেনেভা চুক্তি’ বাস্তবায়নের অংশ। গত মাসে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় দুই দেশের মধ্যে সাময়িক বাণিজ্যযুদ্ধ বিরতির আলোচনা হয়। সেখানে ৯০ দিনের জন্য পারস্পরিক শুল্ক আরোপ স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরবর্তীতে লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে চূড়ান্ত চুক্তির কাঠামো নির্ধারিত হয়, এবং ট্রাম্প যে চুক্তির কথা বলেছেন, সেটি সেই কাঠামোর আনুষ্ঠানিক রূপ।

এই সমঝোতার অন্যতম লক্ষ্য ছিল চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজ ও চুম্বক রপ্তানি পুনরায় চালু করা। যা বৈশ্বিক প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা শিল্পে সরবরাহব্যবস্থার সংকট কাটাতে সহায়ক হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক এক সাক্ষাৎকারে জানান, চুক্তিটি দুই দিন আগেই সই হয়েছে। তবে তিনিও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেননি।

চীনও পরে চুক্তির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করে। তারা জানায়, যেসব পণ্যে আগে নিয়ন্ত্রণ ছিল, সেগুলোর রপ্তানিতে অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজ করা হবে। যদিও চীন সরাসরি বিরল খনিজ বিষয়ে কিছু বলেনি।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন,লন্ডন বৈঠকের পর থেকে দুই পক্ষ নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছে এবং চুক্তির কাঠামো চূড়ান্ত হয়েছে। আইনি শর্ত পূরণ করে করা আবেদনগুলো পর্যালোচনা করে অনুমোদন দেওয়া হবে।”

চীনের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত কিছু বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হবে। অন্যদিকে চীনও ২ এপ্রিল থেকে পাল্টা নেওয়া অশুল্ক ব্যবস্থা তুলে নিতে সম্মত হয়েছে।

চীন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপের জবাবে বিরল খনিজ ও চুম্বকের রপ্তানি স্থগিত করেছিল, যার প্রভাব পড়ে বৈশ্বিক শিল্পে। গাড়ি প্রস্তুতকারী, মহাকাশপ্রযুক্তি কোম্পানি, সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারীরা সরবরাহ সংকটে পড়ে।

এ ঘটনার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প প্রশাসনও সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন সফটওয়্যার, বিমান ও অন্যান্য প্রযুক্তিপণ্যের রপ্তানি চীনমুখী নিষিদ্ধ করে দেয়।

মাসের শেষ দিকে ট্রাম্প জানান, চীনের সঙ্গে হওয়া চুক্তির আওতায় বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজ রপ্তানিতে সম্মত হয়েছে। বিনিময়ে চীনা শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।

এই চুক্তি কেবল বাণিজ্যিক বিষয় নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায়। একদিকে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সরবরাহের দ্বার উন্মুক্ত হচ্ছে, অন্যদিকে শিক্ষাখাতে সহনশীলতা ও সহযোগিতার বার্তা দেওয়া হচ্ছে।