
প্রতিবেদক: বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবধান কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সক্রিয় হয়েছে বাংলাদেশ সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে মার্কিন রপ্তানিকারক সংস্থাগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এবার প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরকারিভাবে গম আমদানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এত দিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আসত কেবল সাহায্য হিসেবে।
এই আমদানির জন্য আজ রোববার দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হবে। বাংলাদেশের পক্ষে খাদ্য অধিদপ্তর এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ইউএস হুইট অ্যাসোসিয়েটসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এতে স্বাক্ষর করবেন। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষার্থে তিন লাখ টন গম আমদানি করা হবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে, যদিও এবার চুক্তি হচ্ছে ২ লাখ ২০ হাজার টনের। প্রতি কনসাইনমেন্টে আসবে ১ লাখ ১০ হাজার টন গম।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানান, এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য তিনটি: দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি, বাংলাদেশের পক্ষে মার্কিন জনমত তৈরি এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস। ইতিমধ্যে শেভরন, এক্সিলারেট এনার্জি, ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল এবং ইউএস কটন অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। চূড়ান্ত বৈঠক হবে ২২ জুলাই আমেরিকান অ্যাপারেলস অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের (AAFA) সঙ্গে।
এদিকে, বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কহার ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধির বিষয়ে দুই দফা আলোচনা হলেও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিঠির পর আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন হার কার্যকর হলে মোট শুল্ক দাঁড়াবে ৫০ শতাংশ। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবে। তৃতীয় পর্যায়ের আলোচনার জন্য নির্দিষ্ট তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি।
বাংলাদেশের পক্ষে দীর্ঘদিন ধরেই বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮৭৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করলেও আমদানি করেছে মাত্র ২৫০ কোটি ডলারের পণ্য। আমদানির দিক দিয়ে স্ক্র্যাপ লোহা শীর্ষে, আর রপ্তানির দিক দিয়ে তৈরি পোশাক সবচেয়ে বড় খাত।
বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে গম ছাড়াও উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ, এলএনজি, তুলা, ভোজ্যতেল আমদানি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে ১৯০টি পণ্যের ওপর শুল্কহার শূন্য রাখা হয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে আরও ১০০টি পণ্য এই সুবিধার আওতায় আসছে।
তবে এ ক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) নীতিমালাও বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে, কারণ নির্দিষ্ট কোনো দেশের জন্য এককভাবে শুল্ক হ্রাস বৈধ নয়। সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সতর্ক করে বলেন, একদেশমুখী কৌশল গ্রহণ করা উচিত নয় এবং উচ্চমূল্যে গম ও অন্যান্য পণ্যের আমদানি বর্তমান ডলার সংকটে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। দর-কষাকষির সময় প্রয়োজনীয় অঙ্গীকার সীমিত রাখার পরামর্শও দেন তিনি।