যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরকারি গম আমদানির উদ্যোগ,বাড়ছে উচ্চ মানের গমের প্রবাহ

প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের গম রপ্তানিকারক সমিতি (US Wheat Associates)–এর সঙ্গে সম্প্রতি একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির আওতায় আগামী পাঁচ বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭ লাখ টন উচ্চ মানের গম আমদানি করবে সরকার। মূলত সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে এই গম বিতরণ করা হবে, যাতে দরিদ্র জনগণ সহজে উচ্চ আমিষযুক্ত ও উন্নতমানের গম পায়।

বাংলাদেশে গমের উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় দেশে গমের চাহিদার প্রায় ৮৫ শতাংশ আমদানি করতে হয়। গত অর্থবছরে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ১৬৩ কোটি ডলার ব্যয়ে প্রায় ৫৯ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে। এনবিআরের তথ্যমতে, এই গম এসেছে বিশ্বের আটটি দেশ থেকে। সবচেয়ে বেশি গম এসেছে রাশিয়া (৪৬%) ও ইউক্রেন (১৮%) থেকে। এছাড়া কানাডা (১৯%), আর্জেন্টিনা (৮%), বুলগেরিয়া ও রোমানিয়া (প্রতিটি ৩%), ব্রাজিল (২%) এবং অস্ট্রেলিয়া (১%) থেকে গম আমদানি হয়েছে।

বিশ্ববাজারে মূলত দুই ধরনের গম পাওয়া যায়: সাধারণ আমিষযুক্ত ও উচ্চ আমিষযুক্ত। সাধারণ গমের দাম তুলনামূলকভাবে কম এবং এটি মূলত রুটি ও সাধারণ বেকারি পণ্যে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের গম মূলত আসে রাশিয়া, ইউক্রেন, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া ও ব্রাজিল থেকে এবং টনপ্রতি দাম ২৬৪–২৭৫ ডলারের মধ্যে। অন্যদিকে উচ্চ আমিষযুক্ত গম আসে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে, যার টনপ্রতি দাম পড়ে ৩০০–৩১৩ ডলার। এই গম দিয়ে উন্নত মানের পরোটা, বিস্কুট ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য তৈরি হয়।

যদিও গত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি হয়নি, তথাপি গত ২২ বছরে ১৫ বছরে দেশটি থেকে ২২ লাখ টনের বেশি গম আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ লাখ টনের বেশি বেসরকারি খাতে, তিন লাখ টন সরকারি খাতে এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে প্রায় দুই লাখ টন গম এসেছে। সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় ২০১৯–২০ অর্থবছরে—সাড়ে চার লাখ টন, যা এনেছে সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, নাবিল গ্রুপসহ কয়েকটি বড় শিল্পগোষ্ঠী।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের গমের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য টনপ্রতি ২৩৩ ডলার, যা কানাডার তুলনায় ৫২ ডলার ও অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ২৯ ডলার কম। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির খরচ তুলনামূলকভাবে কমতে পারে। ব্যবসায়ীদের মতে, দাম কিছুটা বেশি হলেও যুক্তরাষ্ট্রের গমের মান ভালো, এবং প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা থাকলে বেসরকারি খাতেও আমদানি বাড়তে পারে।

ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বলেন, গম ছাড়াও তুলা, এলপিজি, সয়াবিন ও ইস্পাতের কাঁচামাল হিসেবে স্ক্র্যাপ—এই চারটি পণ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির সম্ভাবনা রয়েছে, যার বাজার প্রায় চার বিলিয়ন ডলার। এজন্য সরকারকে লজিস্টিক খাতে নীতিগত সহায়তা বাড়াতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই সমঝোতা স্মারক কেবল গম নয়, বরং দ্বিপক্ষীয় আস্থা ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার করবে। এতে উভয় দেশের জনগণই উপকৃত হবে।