
প্রতিবেদক: ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পর বিশ্ববাজারে শুধু তেলের দামই নয়, কমেছে সোনার দামও। সাধারণত ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সময় সোনার মূল্য বাড়ে, কারণ তখন সোনা নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে এবারের ১২ দিনের এই সংঘাত সোনার দামে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেনি।
যুদ্ধ শুরু হলে প্রথমে সোনার দাম বাড়ে—১৩ জুন আউন্সপ্রতি স্পট সোনার দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৩,৪৩৩.৪৮ ডলার, যা ১২ জুনের তুলনায় ১.৪ শতাংশ বেশি। গোল্ড ফিউচারসের দাম ৩,৪৫২ ডলার পর্যন্ত উঠে যায়। কিন্তু এরপর যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ার ইঙ্গিতে বাজারে আতঙ্ক কেটে যায় এবং সোনার দাম পড়তে থাকে।
১৪ জুন সোনার দাম নেমে আসে আউন্সপ্রতি ৩,৩৮৪ ডলারে। এরপর ১৮ জুন তা আরও কমে ৩,৩৬৭ ডলারে নামে। গতকাল (বুধবার) সোনার দাম দাঁড়ায় ৩,৩২৭ ডলার, অর্থাৎ যুদ্ধ শুরুর আগের (১২ জুন) দামের চেয়েও কম।
মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার পর বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের দিকে ঝুঁকতে থাকেন। গত মঙ্গলবার বিশ্ববাজারে সোনার দাম একদিনেই ১.৪ শতাংশ কমে যায় এবং একপর্যায়ে তা ২ শতাংশ পর্যন্ত নিচে নামে। গোল্ড ফিউচারসও ১.৮ শতাংশ পড়ে গিয়ে হয় ৩,৩৩৩.৯ ডলার।
বিশ্ববাজারে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি। মূল্যস্ফীতি ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা থাকায় সোনার দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ঐতিহাসিকভাবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় সোনার দাম বাড়ে। যদিও এবার তাৎক্ষণিক প্রভাব কিছুটা ব্যতিক্রম।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, আউন্সপ্রতি ৩,৩০০ ডলারের আশপাশে সোনার দাম থাকলে বাজারে বেচাকেনা বাড়বে, আর যদি তা ৩,২৫০ ডলারে নামে, ক্রয় আরও বাড়তে পারে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আরোপিত নতুন শুল্কমূল্যের প্রভাব মূল্যস্ফীতিতে কীভাবে পড়ছে তা বুঝতে আরও সময় লাগবে। এরপরই সুদের হারে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হবে।
বাজার বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, চলতি বছরের শেষে সুদের হার মোট ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমানো হতে পারে, যার প্রথম ধাপ হতে পারে অক্টোবরেই ২৫ পয়েন্ট হ্রাস। সাধারণত সুদের হার কমলে ডলার দুর্বল হয় এবং সোনার চাহিদা বাড়ে।
সোনার পাশাপাশি রুপার দামেও ওঠানামা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গতকাল রুপার দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬.০৫ ডলারে (আউন্সপ্রতি), যেখানে আগের দিন ছিল ৩৫.৮৩ ডলার। প্লাটিনামের দাম বেড়ে হয়েছে ১,৩১৪.৯১ ডলার, তবে প্যালাডিয়ামের দাম কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ১,০৬১.৯০ ডলারে।
বিশ্ববাজারে সোনার দাম নিয়ে বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন গোল্ডম্যান স্যাকস ও ব্যাংক অব আমেরিকা আশাবাদী। তাঁদের পূর্বাভাস অনুযায়ী,২০২৫ সালের শেষ নাগাদ সোনার দাম হতে পারে ৩,৭০০ ডলার ,২০২৬ সালের মাঝামাঝি তা ছাড়িয়ে যেতে পারে ৪,০০০ ডলার ,ব্যাংক অব আমেরিকা বলছে, আগামী ১২ মাসের মধ্যেই সোনার দাম ৪,০০০ ডলার ছুঁতে পারে।তাঁদের মতে, বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা ক্রয়ের ধারা এই মূল্যবৃদ্ধিকে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তি দেবে।
বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশেও সোনার দাম কমানো হয়েছে। মঙ্গলবার সোনার প্রতি ভরিতে সর্বোচ্চ ১,৬৬৮ টাকা কমানো হয়। ফলে ২২ ক্যারেটের সোনার দাম দাঁড়িয়েছে ১,৭২,৮৬০ টাকা। নতুন এই দাম বুধবার থেকে কার্যকর হয়েছে।
যুদ্ধ, অর্থনৈতিক চাপ ও ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে বিশ্ববাজারে সোনার দাম এখন ওঠানামার মধ্যে আছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে সোনাই আবারও সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রাখবে।