
প্রতিবেদক: রাইড শেয়ারিং চালকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তাঁদের ন্যায্য মজুরি, শ্রম অধিকার ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। পাশাপাশি এ খাতের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে একটি পৃথক নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠনের পরামর্শও দিয়েছে কমিশন।
সম্প্রতি শ্রম সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, গিগ অর্থনীতি বা প্ল্যাটফর্মভিত্তিক রাইড শেয়ারিং খাতে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য একটি বিশেষ মজুরি কাঠামো নির্ধারণ এবং কোম্পানিগুলোর কমিশন হার যৌক্তিকভাবে হ্রাস করা জরুরি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বহুজাতিক রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোর দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী শ্রমিক সুরক্ষা, ন্যায্য মজুরি ও শোভন কর্মপরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে চালক ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক (২৪/৭) কল সেন্টার চালু, ডেটাবেজ সংরক্ষণ এবং নির্দিষ্ট নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে দেশি-বিদেশি মিলে ১৫টি রাইড শেয়ারিং কোম্পানি কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে মূল বাজার নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে মাত্র তিনটি কোম্পানির মাধ্যমে। যদিও এ খাতে কর্মরত চালকদের প্রকৃত সংখ্যা স্পষ্ট নয়, সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এ সংখ্যা লাখের কাছাকাছি।
রাইড শেয়ারিং সেবায় যাত্রী ও চালকদের অভিযোগের অন্ত নেই। চালকেরা অনেক সময় অ্যাপ বাদ দিয়ে ‘খ্যাপ’ পদ্ধতিতে দর-কষাকষির মাধ্যমে ভাড়া ঠিক করেন, যাতে যাত্রীদের অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হয়। চালকেরা অভিযোগ করেন, কোম্পানিগুলোর কমিশন বেশি হওয়ায় তাঁদের প্রাপ্ত আয় কমে যাচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ রয়েছে যথেচ্ছ পার্কিং, গন্তব্যে যেতে না চাওয়া ও ফুটপাতে মোটরসাইকেল তোলা ইত্যাদি আচরণ নিয়ে। যদিও এসব সমস্যার সমাধানে ২০১৭ সালে ‘রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা’ প্রণয়ন করা হলেও তার প্রয়োগ কার্যকর হয়নি।
প্রতিবেদনে সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী জনবল কাঠামো হালনাগাদ করে আউটসোর্সিং নিয়োগ বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে। পরিবর্তে এসব ক্ষেত্রে সরাসরি নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে কর্মরত শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কমিশনের সুপারিশগুলো হলো—
দীর্ঘ সময় কর্মরত শ্রমিকদের শ্রম আইন অনুযায়ী অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মূল মালিককে দায়বদ্ধ করা, বিনা কারণে চাকরিচ্যুতি বন্ধ করা,প্রকল্প শেষে যোগ্য শ্রমিকদের রাজস্ব খাতে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া,শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার অধিকার ও সিবিএ নির্বাচনে ভোটাধিকার নিশ্চিত করা,অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রাখা।
শ্রম সংস্কার কমিশনের মতে, প্রযুক্তিনির্ভর নতুন শ্রম খাতগুলোকে উপেক্ষা না করে সেগুলোর জন্য যুগোপযোগী নীতিমালা ও কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি, যাতে সকল শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত হয়।