রাজনৈতিক ছায়া নয়, পেশাদারিত্বেই এগিয়ে মধুমতি ব্যাংক

প্রতিবেদক: ২০১৩ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া চতুর্থ প্রজন্মের ৯ ব্যাংকের একটি হলো মধুমতি ব্যাংক। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তির পাশাপাশি দেশের স্বনামধন্য শিল্পগোষ্ঠীও রয়েছে। যদিও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকলেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি ব্যাংকটির আর্থিক ব্যবস্থাপনায়। বরং গত ১২ বছরে মধুমতি ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে আর্থিক সূচকে উন্নতি করে এক শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে।

ব্যাংক খাত–সংশ্লিষ্টদের মতে, চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম খেলাপি ঋণ এবং সর্বোচ্চ নিট মুনাফা করেছে মধুমতি ব্যাংক। ফলে এটি ব্যাংকিং ব্যবস্থায় একটি শক্তিশালী অবস্থান অর্জন করেছে। ব্যাংকটির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষে ব্যাংকের মোট ঋণ ৬৬৩ কোটি টাকা এবং খেলাপি ঋণ মাত্র ১৫৩ কোটি, যা মোট ঋণের ২.৩০ শতাংশ। একই বছর ব্যাংকটির নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১২৬ কোটি টাকায়।

২০২৩ সালে ব্যাংকটি ৮,০১১ কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করেছে। পাশাপাশি ৪,৭৯৫ কোটি টাকার আমদানি ও ৫,৩৭০ কোটি টাকার রপ্তানি বাণিজ্যে অংশ নিয়েছে। ব্যাংক গ্যারান্টি ব্যবসার পরিমাণ ছিল ৩,৫৩৩ কোটি টাকা। ব্যাংকের তহবিল খরচ ছিল ৬.৩১% এবং আয় অনুযায়ী ব্যয় ছিল মাত্র ৩৪ টাকা ৪৬ পয়সা প্রতি ১০০ টাকায়। মূলধন পর্যাপ্ততার হার ছিল ১৫.৮০ শতাংশ, যা অন্যতম সর্বোচ্চ।

১২ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন করেছে মধুমতি ব্যাংক। যদিও এখনো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি, তবে শেয়ারবাজারে আসার প্রস্তুতি শুরু করেছে। এর মধ্যে ব্যাংকটি বিনিয়োগকারীদের ১৩৮% লভ্যাংশ দিয়েছে। ২০১৩ সালে যারা ১০ কোটি টাকা মূলধন দিয়েছিল, তারা ইতোমধ্যে ১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা লভ্যাংশ পেয়েছে।

ব্যাংকটি শুরু থেকে পেশাদারিত্ব বজায় রেখেছে। জনবল নিয়োগে স্বচ্ছতা এবং দক্ষতা বিবেচনায় ৮ ধাপে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার । সেবার মান ও ব্যবস্থাপনায় এই পেশাদার দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাংকটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে।

বর্তমানে মধুমতি ব্যাংকের ৫২টি শাখা, ৪৭টি এটিএম ও ৬৪৩টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট রয়েছে। ব্যাংকটির মোট কর্মী সংখ্যা ৭৬০ জন। চলতি বছর শাখা সংখ্যা বাড়িয়ে ৬০-এ উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ব্যাংকের মোট আমানতের ৫৫ শতাংশ করপোরেট খাত থেকে এবং ৪৫ শতাংশ সাধারণ গ্রাহকের কাছ থেকে এসেছে। ঋণের ৭৮ শতাংশ করপোরেট খাতে, বাকিটা খুচরা, এসএমই ও কৃষি ঋণ খাতে বিতরণ করা হয়েছে। ব্যাংকের শীর্ষ গ্রাহক তালিকায় রয়েছে ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল, স্মার্ট টেকনোলজি, রিদিশা গ্রুপ, মীর আকতার গ্রুপ, প্রাণ-আরএফএল, আবুল খায়ের, ইউনিমেড হেলথকেয়ারসহ দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলো।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিউল আজম বলেন, “শুরু থেকেই আমরা পেশাদারিত্ব বজায় রেখে পরিচালনা করছি। পরিচালনা পর্ষদ আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে, যার ফলে আমরা আলাদা পরিচিতি পেয়েছি।” তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে ছোট ও মাঝারি ঋণে আরও গুরুত্ব দেওয়া হবে। পাশাপাশি করপোরেট খাতেও বাছাই করে ঋণ বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে।