রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ইউসিবি ব্যাংক

প্রতিবেদক: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের অন্যতম বেসরকারি ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)-এর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনাতেও বড় পরিবর্তন আসে। পূর্ববর্তী পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের দুর্নীতি ও অর্থপাচারের অভিযোগ ওঠে, যা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। এতে ব্যাংকটির ভাবমূর্তি ও স্থিতিশীলতা সংকটে পড়ে।

এ অবস্থায় ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের অর্থ তুলে নেয় করপোরেট গ্রাহকেরা। ফলে ইউসিবি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাহিদামতো সিআরআর (নগদ জমা সংরক্ষণ) বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়। তবে নতুন পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা ব্যাংকটির সংকট সামাল দিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়। কয়েক মাসের মধ্যেই ব্যাংকটি তারল্যসংকট কাটিয়ে ওঠে এবং গ্রাহকের আস্থা পুনরুদ্ধার করে।

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৭ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা নিট আমানত বেড়েছে ব্যাংকটিতে। ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষে আমানতের পরিমাণ ছিল ৫৫ হাজার ৪২২ কোটি টাকা, যা ২০২৪ সালের জুনে বেড়ে দাঁড়ায় ৬৩ হাজার ২০৪ কোটি টাকায়। শুধু জুন মাসেই আমানত বেড়েছে ২ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। একই সময়ে ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা, দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার ৮১৬ কোটি টাকায়।

ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) এখন ৮৭.৫ শতাংশ, যা আগের ৯২.৫ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে—এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার মধ্যে। ব্যাংকের খুচরা গ্রাহকেরা এ আমানত বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন—সর্বমোট নতুন আমানতের মধ্যে ৫৬ শতাংশ খুচরা গ্রাহক, ৩২ শতাংশ করপোরেট ও ১২ শতাংশ এসএমই গ্রাহক। উল্লেখযোগ্যভাবে, ৪০ শতাংশ আমানত ছিল কম সুদের।

তবে আওয়ামী লীগ আমলে বিতরণ করা অনেক ঋণ খেলাপিতে পরিণত হওয়ায়, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৫ শতাংশ, যেখানে ২০২৩ সালের শেষে এটি ছিল ৭ শতাংশের নিচে।

ব্যাংকটি এখন মূলধন দ্বিগুণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য রাইট শেয়ার ও নতুন শেয়ার ইস্যুর পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং বিদেশি কৌশলগত বিনিয়োগকারী খোঁজা হচ্ছে।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ বলেন, “আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ভালো আমানত আসছে, ধীরে ধীরে ঋণও বাড়ানো হচ্ছে। ব্যাংকের মূলধন ভিত্তি শক্তিশালী করার পাশাপাশি আমরা নতুন করে ব্যাংকটিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছি। সব ধরনের আর্থিক পণ্য ব্যাংকে যুক্ত করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে, যাতে গ্রাহক তাঁদের প্রয়োজনীয় সব সেবা এক জায়গায় পান।

ইউসিবির এই ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য এক আশাব্যঞ্জক ইঙ্গিত, যা সংকটকালীন সময়েও দায়িত্বশীল নেতৃত্ব ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।