
প্রতিবেদক: রাজশাহীর সাহেববাজার কাঁচাবাজারে বর্তমানে প্রতি হালি লাল ডিম ৩৮ টাকা এবং সাদা ডিম ৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পুষ্টিবিশেষজ্ঞদের মতে, লাল ও সাদা—দুই রঙের ডিমেই পুষ্টিমানের কোনো পার্থক্য নেই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. জালাল উদ্দিন সরদার বলেন, ডিমের স্বাদ ও গুণাগুণ একই থাকে, যদি না বিশেষ খাবার খাওয়ানো হয়। খোসার পুরুত্বও নির্ভর করে মুরগির বয়সের ওপর, রঙের ওপর নয়।
তবু বাজারে লাল ডিমের দাম বেশি। কাজী ফার্মসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, লাল ডিমের চাহিদা বেশি, তাই দামও বেশি। তিনি জানান, দেশে সাধারণত লাল ডিমই বেশি উৎপাদিত হয়, তবে রাজশাহী অঞ্চলে সাদা ডিমের উৎপাদন বেশি।
তবে দোকানিদের ভাষ্য বলছে ভিন্ন কথা। হাদির মোড়ের সুলতান স্টোরের মালিক জানান, তাঁর এলাকায় সাদা ডিমের চাহিদা বেশি—প্রায় তিনগুণ। সাহেববাজারের জেআরপি এন্টারপ্রাইজ প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার সাদা ডিম এবং ৮ থেকে সাড়ে ৯ হাজার লাল ডিম বিক্রি করে।
ডিম কেনার পেছনে মানুষের যুক্তিও ভিন্ন ভিন্ন। কেউ বলেন, সাদা ডিম সস্তা তাই কিনেন, কেউ বলেন স্বাদ বা ভাঙার ভয় রয়েছে বলে লাল ডিমই পছন্দ। আবার অনেকে বলেন, সাদা ডিম আকারে বড় এবং ক্যালরি বেশি থাকে। কেউ কেউ লাল ডিমকে দেশি ডিমের কাছাকাছি ভেবে কেনেন, যদিও উভয়ই খামারের।
পবা উপজেলার খামারি কামাল হোসেন জানান, তাঁর খামারে ৫ হাজার লাল ডিমের এবং ৬০ হাজার সাদা ডিমের মুরগি রয়েছে। লাল ডিম উৎপাদনে খরচ বেশি হয়, কারণ ওই মুরগিদের বেশি খাবার দিতে হয় এবং পরিচর্যার খরচও বেশি। তিনি জানান, লাল ডিমের উৎপাদন খরচ প্রতি হালিতে প্রায় ৫০ পয়সা বেশি পড়ে।
বর্তমানে সাদা ডিমের পাইকারি দাম প্রতি হালি ২৭.৬০ টাকা এবং বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকায়। আর লাল ডিমের পাইকারি দাম ৩২.৪০ টাকা এবং বাজারমূল্য ৩৮ টাকা।
পারিলা বাজারের ডিলার গোলাম রাব্বানির মতে, সাধারণ খামারিরা সাদা ডিমের মুরগি পালন করেন, আর লাল ডিম উৎপাদন করে বড় কোম্পানিগুলো, যারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি জানান, সাদা ডিমের দাম এতটাই পড়ে গেছে যে অনেক খামারি ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
রাজশাহীতে সাদা ও লাল ডিমের বাজারে যেমন দামের পার্থক্য আছে, তেমনি রয়েছে চাহিদা ও ব্যবহারে বৈচিত্র্য। যদিও পুষ্টিমান এক, তবুও স্বাদ, ধারণা, দাম ও ব্যবহার ভেদে মানুষের পছন্দ ভিন্ন। আর এই বৈচিত্র্যের মাঝে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাদা ডিমের খামারিরা, যাদের জন্য প্রয়োজন ন্যায্য মূল্য ও বাজারে স্থিতিশীলতা।