
প্রতিবেদক: বাংলাদেশে রাবার শিল্প এক সময় সম্ভাবনাময় হলেও, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অস্থিতিশীলতার কারণে খাতটি তার জৌলুস হারাচ্ছে। রাবারের চাহিদা কমে যাওয়ার পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা উৎপাদনকারীদের জন্য বাড়িয়ে দিয়েছে সংকট। গত ছয় মাসে রাবারের দাম প্রতি কেজি ২৮০ টাকা থেকে কমে ২২০ টাকা হয়ে যাওয়ায় চাষি ও উৎপাদকরা ক্রমবর্ধমান লোকসানের মুখে পড়েছেন।
লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে হাজার হাজার কর্মী কাজ হারাচ্ছেন এবং রাবার উৎপাদন সংকুচিত হচ্ছে। তিনি বলেন, “উৎপাদকরা টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাৎক্ষণিক সরকারি হস্তক্ষেপ না হলে, দীর্ঘমেয়াদে এই শিল্পের ক্ষতি হতে পারে।”
এদিকে, গাজী টায়ার কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর, প্রাকৃতিক রাবারের বড় ক্রেতা এই প্রতিষ্ঠানটি ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিয়েছে। গাজী টায়ার দেশের উৎপাদিত প্রাকৃতিক রাবারের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ব্যবহার করে, কিন্তু গত বছর আগস্টের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে প্রতিষ্ঠানটি দৈনিক প্রায় ২৫ টন রাবার কিনতে পারছে না।
বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের (বিআরবি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার একর জমিতে রাবার চাষ হচ্ছে এবং প্রতি বছর ৬৭ হাজার ৯৩৯ টন প্রাকৃতিক রাবার উৎপাদিত হচ্ছে। বেসরকারি খাতে এক হাজার ৩০৪টি রাবার বাগান পরিচালিত হচ্ছে, আর রাষ্ট্রীয় খাতে ২৮টি বাগান রয়েছে।
এছাড়া, রাবার চাষিদের জন্য নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে দাঁড়িয়েছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও বাগান রক্ষা করতে মালিকরা সমস্যায় পড়ছেন, ফলে রাবার উৎপাদন কমছে। সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন সরকারের কাছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন, না হলে রাবার শিল্পের ভবিষ্যত ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
এদিকে, খাগড়াছড়ি আদিবাসী রাবার বাগান মালিক সমিতির সভাপতি সমীর দত্ত চাকমা বলেন,এ অঞ্চলের চাষিরা কখনোই ন্যায্যমূল্য পান না। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে প্রতি কেজি রাবার ১৮০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কমে ১২০ টাকায় নেমে এসেছে।” তিনি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার অভাবের কথাও তুলে ধরেছেন।
বাংলাদেশ রাবার বাগান মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, “গাজী টায়ারের রাবার কেনার পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে দাম কমেছে, তবে আমি আশাবাদী। অর্থনীতির পরিধি বাড়লে রাবারের চাহিদা বাড়বে।
গাজী টায়ারের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, তারা সীমিত আকারে রাবার প্রক্রিয়াজাত করছেন এবং আগামী আগস্টের মধ্যে উৎপাদন শুরু করার লক্ষ্য নিয়েছেন। তবে, ব্যাংক ঋণ অনুমোদন হলে উৎপাদন শুরু করতে সর্বোচ্চ চার মাস সময় লাগতে পারে।
রাবার শিল্পের অস্থিতিশীলতা রোধ করতে দ্রুত সরকারী হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, অন্যথায় দেশের রাবার শিল্পের ভবিষ্যত হুমকির মুখে পড়বে।