
প্রতিবেদক: ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল শোধনাগারগুলো সম্প্রতি রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা বন্ধ করেছে বলে জানানো হয়েছে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে। গত মাসে রুশ তেলের ওপর ছাড় কমে আসার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই খবরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার ভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, রাশিয়া থেকে তেল কিনে ভারত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার ব্যয়ভার বহনে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছে। ফলে এই শুল্ক ছাড়াও দেশটিকে অনির্দিষ্ট হারে ‘দণ্ড’ পেতে হবে। ট্রাম্প আরও হুঁশিয়ার করেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে শান্তিচুক্তি না হলে যেসব দেশ রুশ তেল কিনছে, তাদের ওপর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ ভারত। তারা রপ্তানিযোগ্য রুশ অপরিশোধিত তেলের অন্যতম বড় ক্রেতা। তবে গত সপ্তাহে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত তেল শোধনাগারগুলো—ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন, হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম, ভারত পেট্রোলিয়াম ও মাঙ্গালোর রিফাইনারি অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যালস—রুশ তেলের কোনো দরপত্র দেয়নি বলে রয়টার্সকে জানায় সংশ্লিষ্ট চারটি সূত্র। ফেডারেল তেল মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করেনি।
সূত্রগুলোর মতে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো আগে নিয়মিত সরবরাহ চুক্তির ভিত্তিতে রুশ তেল কিনত। কিন্তু বর্তমানে তারা বিকল্প উৎসের দিকে ঝুঁকছে। মূলত আবুধাবির মুরবান ক্রুড ও পশ্চিম আফ্রিকার তেল এখন তাদের আগ্রহের কেন্দ্রে। যদিও বেসরকারি কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও নায়ারা এনার্জি এখনও রুশ তেলের বড় ক্রেতা, তবে রাষ্ট্রায়ত্ত শোধনাগারগুলো দেশের মোট দৈনিক শোধনক্ষমতার ৬০ শতাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ করে।
এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্প জানান, তিনি শুনেছেন ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করেছে এবং এটিকে ‘ভালো পদক্ষেপ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে তিনি বলেন, “আমার জানা মতে, ভারত আর রাশিয়া থেকে তেল কিনবে না, এটা ভালো পদক্ষেপ। দেখা যাক, কী হয়।”
তবে ভারতের পক্ষ থেকে এই দাবির জবাব এসেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জ্বালানি কেনাবেচার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে বাজারের পরিস্থিতি ও জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে নেওয়া হয়। কোনো ভারতীয় কোম্পানি রুশ তেল আমদানি বন্ধ করেছে—এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “জ্বালানি কেনার উৎস নির্ধারণের বিষয়ে আমাদের বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি আছে। আমরা বাজারের সহজলভ্যতা অনুযায়ী তেল কেনার চেষ্টা করি এবং এ ক্ষেত্রে আমাদের নির্দিষ্ট কোনো উৎস নেই।”
রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়েও তারা স্পষ্ট অবস্থান জানায়। এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাশিয়া ভারতের ‘পরীক্ষিত অংশীদার’। ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নিজস্ব ভিত্তির ওপর নির্ভর করে এবং তা তৃতীয় কোনো দেশের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা উচিত নয়।