রেমিট্যান্সে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি, আবারও ২২ বিলিয়নের ঘরে রিজার্ভ

প্রতিবেদক: চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৭৫ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স—যা একক মাস হিসেবে দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত বছরের একই মাসের তুলনায় এ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৭১ কোটি ডলার বা ৩৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

সর্বশেষ মার্চ মাসে এসেছিল দেশের ইতিহাসে এক মাসে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলার। আর ডিসেম্বর মাসে এসেছিল ২৬৪ কোটি ডলার। এই ধারাবাহিক উর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেশের বৈদেশিক আয়ের চিত্রে আশাব্যঞ্জক বার্তা দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জানায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই থেকে এপ্রিল) প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন মোট ২ হাজার ৪৫৪ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১ হাজার ৯১২ কোটি ডলার। অর্থাৎ ১০ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৫৪২ কোটি ডলার বা ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এমনকি পুরো আগের অর্থবছরের মোট রেমিট্যান্স (২ হাজার ৩৯১ কোটি ডলার) এর চেয়েও চলতি অর্থবছরের ১০ মাসেই বেশি এসেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের এই প্রবৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির জন্য স্বস্তির বার্তা। একই সঙ্গে রপ্তানি আয়েও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে—প্রায় ১১ শতাংশের বেশি।

এসব ইতিবাচক প্রবণতার প্রভাবে টানা ২০ মাস পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলারে। এর আগে সর্বশেষ ২০২৩ সালের আগস্টে রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার। এরপর ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে তা ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল গত জুলাইয়ে।

ব্যাংকাররা বলছেন, রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে উন্নতির ফলে দেশে এখন আর ডলার সংকট নেই। গত সরকারের সময় একসময় যেখানে ডলার ১২৭ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল, সেখানে এখন দীর্ঘদিন ধরে তা ১২২ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে। এর ফলে আমদানি, ভ্রমণসহ বিভিন্ন খাতে আরোপিত বিধিনিষেধও তুলে নিয়েছে সরকার।

তবে সবকিছু সত্ত্বেও বিদেশি বিনিয়োগে কিছুটা স্থবিরতা রয়েছে। চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমদানিতে ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও বিদেশি বিনিয়োগ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কিছুটা কমেছে। এদিকে, সরকার পরিবর্তনের পর এখনও পর্যন্ত আইএমএফের ঋণের কোনো কিস্তি আসেনি, তবুও রিজার্ভ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত আছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সামগ্রিকভাবে রেমিট্যান্স, রপ্তানি ও স্থিতিশীল ডলার বিনিময় হার দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক সংকেত দিচ্ছে, যা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।