লিচুর ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় দুশ্চিন্তায় ঈশ্বরদীর চাষি ও ব্যবসায়ীরা

অনলাইন ডেক্স: প্রতি বছর ফাল্গুনের শুরুতেই লিচু গাছে মুকুল আসতে শুরু করে, যা দেখে আনন্দে মুখে হাসি ফুটে চাষিদের। তবে এ বছর পাবনার ঈশ্বরদীতে চিত্র একেবারেই ভিন্ন। বেশিরভাগ গাছে মুকুলের পরিবর্তে দেখা যাচ্ছে নতুন পাতা, যা লিচুর ফলনে বড় ধস নামাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

লিচু চাষিরা জানান, সাধারণত প্রতি বাগানে ৬০-৭০ শতাংশ গাছে মুকুল আসে, কিন্তু এবার ৭০-৮০ শতাংশ গাছে মুকুলের বদলে নতুন পাতা দেখা যাচ্ছে। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত লিচু চাষি শাজাহান আলী বাদশা বলেন, ‘আমার বাগানে ৬০০-এর বেশি লিচু গাছ আছে। প্রতি বছর চার থেকে পাঁচ শ গাছে মুকুল আসে। এ বছর এসেছে মাত্র ১০০ থেকে ১৫০ গাছে, বাকিগুলোয় নতুন পাতা।

এমন বিপর্যয় আগে কখনো দেখেননি বলে জানান তিনি। ফলে এবার কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়ার আশা নেই।

ঈশ্বরদীর প্রায় সাড়ে তিন হাজার লিচু বাগানে প্রতি বছর কমপক্ষে আড়াই হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়। এবার উৎপাদন কম হলে কৃষি অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ঈশ্বরদী কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, ‘আশানুরূপ মুকুল না আসায় এ বছর ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। নির্দিষ্ট কারণ জানা না গেলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থাকতে পারে।’ ফাল্গুন শেষে কৃষি বিভাগের জরিপের পর সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।

মুকুল কম আসায় গাছের দাম বেড়ে গেছে, ফলে ব্যবসায়ীরাও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। সাহাপুর গ্রামের লিচু চাষি ও ব্যবসায়ী মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ দামে গাছ কিনতে হয়েছে। ২০০ গাছ কিনতে খরচ পড়েছে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা, যেখানে গত বছর ১০০ গাছ কিনতে খরচ হয়েছিল দেড় লাখ টাকা।’

অপর কৃষক রাকিবুল ইসলাম জানান, তার ১০০ গাছের মধ্যে মাত্র ২৫টিতে মুকুল এসেছে। তিনি বলেন, ‘এ বছর মুকুল এত কম আসায় গাছ কিনতে পারিনি। লিচুর উৎপাদন খরচ চার টাকার বেশি হলে লাভ করা কঠিন হয়ে যাবে।’

লিচু ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, ঈশ্বরদীর লিচু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হয়। তবে মুকুল সংকটের কারণে এবার লিচুর উৎপাদন কম হবে এবং বাজারে দামও অনেক বেশি থাকবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, পাবনায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়, যার মধ্যে ঈশ্বরদীতেই ৩ হাজার হেক্টর। এবার ফলন বিপর্যয় হলে কৃষি অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগতে পারে। তবে সুনির্দিষ্ট কারণ নিশ্চিত করতে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।