
প্রতিবেদক: ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে লেনদেন কর (টার্নওভার ট্যাক্স) বাড়িয়ে ১ শতাংশ নির্ধারণ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, যা আগে ছিল শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই কর বৃদ্ধির ফলে তাদের ওপর অতিরিক্ত আর্থিক চাপ তৈরি হবে এবং অনেক প্রতিষ্ঠান লোকসানের মুখে পড়বে।
লেনদেন কর এমন একটি কর, যা ব্যবসা লাভ করুক বা লোকসান—সব অবস্থাতেই দিতে হয়। অর্থাৎ, লোকসানে গেলেও কোম্পানিকে শুধু পণ্য বিক্রির ভিত্তিতে সরকারের নির্ধারিত পরিমাণ কর দিতে হবে। এটি করপোরেট করের একটি বিকল্প রূপ, যা আয় নয়, লেনদেনের ওপর নির্ধারিত।
এফএম প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহম্মদ গাজী তৌহিদুর রহমান বলেন, “লেনদেন কর বাড়ানো উচিত হয়নি। এতে মুনাফার তুলনায় যাঁদের লেনদেন বেশি, তাঁরা ভয়াবহ সমস্যায় পড়বেন। লোকসান হলে এই কর হয়ে দাঁড়াবে বড় বোঝা।”
ফ্যাশন উদ্যোক্তা সংগঠন এফইএবি-এর সভাপতি আজহারুল হক আজাদ বলেন, “ছোট-মাঝারি ফ্যাশন হাউসগুলো আগে থেকেই লোকসানে আছে। এখন এই কর বৃদ্ধিতে তাদের চলতি মূলধনের ঘাটতি তৈরি হবে। বাধ্য হয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করতে পারে।
কেপিসি এন্টারপ্রাইজের চেয়ারম্যান কাজী সাজেদুর রহমান বলেন, “লেনদেন কর বাড়ানোর যুক্তি হচ্ছে আর্থিক প্রতিবেদনে কারচুপি করা প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা। কিন্তু এর দায় ছোট ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে, যা অমানবিক।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, এনবিআর রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থ হলে লেনদেন কর বাড়িয়ে ফেলে। অথচ করজাল সম্প্রসারণ ও অটোমেশন বাড়ালেই রাজস্ব আদায় বাড়বে। লেনদেন কর বৃদ্ধি নয়, ছোট উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে এই নীতির পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন।
বাজেটে যদিও সাধারণ ব্যবসার ক্ষেত্রে লেনদেন কর বাড়ানো হয়েছে, কিছু খাতে তা কমানো বা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। যেমন-টেলিযোগাযোগ খাতে লেনদেন কর কমিয়ে ২ শতাংশ থেকে ১.৫ শতাংশ করা হয়েছে।তামাক ও কোমল পানীয় শিল্পে আগের মতোই ৩ শতাংশ কর বহাল রাখা হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের মতে, লেনদেন কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ছোট ও মাঝারি ব্যবসার বিকাশে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তারা বলছেন, রাজস্ব আদায়ের কার্যকর পথ হচ্ছে অটোমেশন, নজরদারি ও করজাল সম্প্রসারণ, কর হার বৃদ্ধি নয়।