
প্রতিবেদক: কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুই দিনের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রামের ১৯টি কনটেইনার ডিপোতে প্রায় ১৪ হাজার রপ্তানিযোগ্য কনটেইনার জমে গেছে। গতকাল রোববার রাতে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা এলেও দিনের বেলায় কোনো পণ্য রপ্তানি হয়নি। তবে সন্ধ্যার পর সীমিত পরিসরে শুল্কায়নের কিছু কার্যক্রম শুরু হয়।
বন্দর, শিপিং এজেন্ট ও ডিপো সূত্রে জানা গেছে, শনিবার কর্মসূচির প্রথম দিনে ৬৩ কনটেইনার পণ্য রপ্তানির অপেক্ষায় থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয় দিনে তিনটি জাহাজে নির্ধারিত ৩,৬৮০ কনটেইনার রপ্তানি করা যায়নি। এসব জাহাজ রপ্তানি পণ্য না পেয়ে বন্দর ছেড়ে যেতে পারেনি, ফলে জাহাজগুলো জেটিতে অলস পড়ে রয়েছে। এখন এই বিপুলসংখ্যক কনটেইনার সময়মতো পাঠানো সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
পোশাকশিল্প এই ক্ষতির সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। চট্টগ্রামের এশিয়ান-ডাফ গ্রুপের ৩০টি কনটেইনার যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর কথা ছিল। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সালাম বলেন, “এই দুই দিনের কর্মসূচিতে পোশাক খাতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আমাদের পণ্য আর সময়মতো ক্রেতার হাতে পৌঁছাবে না।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, কাস্টমস কর্মকর্তারা কর্মবিরতিতে থাকায় জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানো, পণ্য খালাস বা রপ্তানিসহ কোনো কার্যক্রমই করা সম্ভব হয়নি। শনিবার কেবল পূর্বানুমোদিত ১৩৯টি কনটেইনার খালাস হয়। এরপর রোববার তিনটি জাহাজ—‘এএস সিসিলিয়া’, ‘এক্সপ্রেস নিলওয়ালা’ ও ‘হং ডা জিন-৬৮’—নির্ধারিত সময়েও রপ্তানি পণ্য না পাওয়ায় বন্দরে আটকে পড়ে।
এএস সিসিলিয়া’ জাহাজটির দায়িত্বে থাকা অপারেশন প্রধান আজমীর হোসেন চৌধুরী বলেন, “এই জাহাজের কনটেইনারগুলো সিঙ্গাপুরে যাওয়ার কথা ছিল, সেখান থেকে ইউরোপ ও আমেরিকার বড় জাহাজে ওঠানোর জন্য। এখন সময়মতো তা সম্ভব হচ্ছে না।
শিপিং কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, রপ্তানি পণ্য প্রথমে কারখানা থেকে ডিপোতে আসে, যেখানে শুল্কায়নের পর কনটেইনারে পণ্য ভরে বন্দরে পাঠানো হয়। কিন্তু শুল্কায়ন না হওয়ায় পুরো প্রক্রিয়াই থমকে গেছে। ফলে বন্দরে জাহাজ জট তৈরি হয়েছে। শনিবার জেটিতে ভেড়ানোর জন্য সাগরে অপেক্ষমাণ জাহাজ ছিল ১৩টি, যা রবিবার বেড়ে দাঁড়ায় ২১টিতে। একইভাবে বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনারের সংখ্যা ২ হাজার থেকে বেড়ে ৪১ হাজারে পৌঁছেছে।
সরকার গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সব পর্যায়ের চাকরি অত্যাবশ্যকীয় সেবা হিসেবে ঘোষণা করে। পাশাপাশি আন্দোলনরত কর্মীদের কর্মস্থলে ফেরার আহ্বান জানানো হয়। এর পর সন্ধ্যার পর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে সীমিত আকারে কার্যক্রম শুরু হয়। কনটেইনার ডিপো সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার জানান, “সন্ধ্যার পর থেকে ডিপোগুলোতে রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়ন কার্যক্রম ধীরে ধীরে শুরু হয়েছে।”
এই দুই দিনের কর্মসূচির প্রভাবে তৈরি পোশাক খাতসহ দেশের রপ্তানি কার্যক্রম বড় ধরনের ধাক্কা খেল। একই সঙ্গে বন্দরে তৈরি হয়েছে জাহাজ ও কনটেইনার জট, যার প্রভাব পড়বে আমদানি খাতেও।