
প্রতিবেদক: চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৪৩টি খাতে রপ্তানি প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা বহাল রেখেছে সরকার। আগের হার অনুসারে পণ্যভেদে এই সহায়তা দেওয়া হবে ০.৩০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত। বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন গতকাল বৃহস্পতিবার জারি করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, রপ্তানি খাতে প্রণোদনা পুরোপুরি তুলে নেওয়ার সময়সীমা আরও পাঁচ মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০২৬ সালের জুলাই থেকে এটি কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও এখন নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে একই বছরের নভেম্বর মাস। সূত্রটি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্কারোপ, ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে শিল্প খাতে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে—এই তিনটি প্রধান কারণে সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত সাত অর্থবছরে রপ্তানি খাতে সরকার মোট ৪৬ হাজার ৭১৫ কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশেরও বেশি গেছে তৈরি পোশাক খাতে। তবে গত বছরের দুটি ধাপে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার রপ্তানি প্রণোদনা কমিয়ে আনে। কারণ, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে চলে যাবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) বিধি অনুযায়ী, উত্তরণের পর কোনো দেশ রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দিতে পারে না। ফলে সহায়তা একবারে বন্ধ না করে ধাপে ধাপে কমানোর কৌশল নিয়েছে সরকার।
প্রণোদনার তালিকায় এখনও সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র শিল্প। দেশি সুতা ব্যবহার করে তৈরি পোশাক নতুন বাজারে রপ্তানি করলে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৯ শতাংশ প্রণোদনা মিলবে, যা আগে ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। চামড়াজাত পণ্যে প্রণোদনা থাকছে ১০ শতাংশ এবং ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদারে ৬ শতাংশ। প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা বহাল থাকছে।
পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি গত কয়েক বছর ধরে কমলেও বৈচিত্র্যময় পণ্যে ১০ শতাংশ প্রণোদনা বহাল থাকবে। সাধারণ পাটজাত পণ্যে ৫ শতাংশ এবং পাট সুতায় ৩ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হবে। হালকা প্রকৌশল পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ, ওষুধের কাঁচামালে ৫ শতাংশ, বাইসাইকেলে ৩ শতাংশ এবং আসবাবপণ্যে ৮ শতাংশ সহায়তা থাকবে।
এছাড়া হিমায়িত চিংড়ি, মোটরসাইকেল, ইলেকট্রনিকস, জাহাজ, প্লাস্টিক পণ্য, পেট বোতল ফ্লেক্স, হস্তশিল্প, পোশাক কারখানার ঝুট, পশুর নাড়িভুঁড়ি ও শিং, কাঁকড়া, কুঁচে, আগর, আঁতরসহ আরও অনেক পণ্যের রপ্তানিতে আগের মতোই নগদ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, রপ্তানিতে নগদ সহায়তার অর্থ পেতে ব্যবসায়ীদের নানা জটিলতা পোহাতে হয়। তিনি প্রস্তাব করেন, প্রবাসী আয়ের মতো সরাসরি প্রণোদনা দেওয়া হলে রপ্তানিকারকদের জন্য তা আরও সহায়ক হবে। পাশাপাশি তিনি বলেন, “ভারতসহ প্রতিযোগী দেশগুলো নানা ধরনের প্রণোদনা দিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহ দিচ্ছে, অথচ বাংলাদেশে উল্টো চিত্র। খরচ বাড়ছে, চ্যালেঞ্জ বাড়ছে, কিন্তু প্রণোদনা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”