শিশুশ্রমে নিয়োজিত ৩৫ লাখ শিশু, শাস্তি বাড়িয়ে সংজ্ঞা পরিবর্তনের উদ্যোগ: শ্রম উপদেষ্টা

প্রতিবেদক: দেশে বর্তমানে প্রায় ৩৫ লাখ শিশু শ্রমিক রয়েছে, যার মধ্যে ১০ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত—এ তথ্য জানিয়ে শিশুশ্রম প্রতিরোধে শাস্তি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, “শিশুদের কাজে নিয়োগ দেওয়া ব্যক্তিদের শাস্তির পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়ানো হবে। পাশাপাশি, শিশুশ্রমের সংজ্ঞাও পরিবর্তন করা হচ্ছে।”

আজ বুধবার সচিবালয়ে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন শ্রম উপদেষ্টা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অমল কৃষ্ণ মণ্ডল ও মো. মুনির হোসেন খান।

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে শ্রম আইনে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুকে কাজ করানো হলে তা শিশুশ্রম হিসেবে গণ্য হয় এবং সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এই শাস্তি অপ্রতুল। শিগগিরই আইন সংশোধন করে জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হবে।

তিনি জানান, নতুন সংজ্ঞায় আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে শিশুশ্রমের বয়সসীমা ও কাজের ধরন স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হবে। দক্ষিণবঙ্গের একটি উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “একজন জেলে বাবার সঙ্গে তার ছেলে মাছ ধরতে যায় এবং সে স্কুলেও যায়—এ ধরনের কাজে জড়িত শিশুকে কি শিশুশ্রম বলা উচিত? বিষয়গুলো স্পষ্ট করতে সংজ্ঞা পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”

শ্রম উপদেষ্টা জানান, সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সম্মেলনে শিশুশ্রম নিয়ে আলোচনা হয়। তিনি বলেন, “আমি তাঁদের বলেছি, শিশুশ্রম বলতে তোমরা যা বোঝাও, আমি তা একভাবে দেখি না। আমাদের বাস্তবতা ভিন্ন।

শিশুশ্রম প্রতিরোধে শুধু সরকারের নয়, পরিবার, সমাজ, প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোরও সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মত দেন শ্রম উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “জোর করে কোনো শিশুকে কাজে পাঠানো যাবে না। এটা দণ্ডনীয় অপরাধ। তবে স্কুলের সময় শেষে কেউ স্বেচ্ছায় কিছু শিখতে চাইলে, সেটাকে ভিন্নভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।”

তিনি আরও জানান, শ্রম আইন সংশোধনের কাজ চলছে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই তা সম্পন্ন হবে।

বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস প্রতিবছর ১২ জুন পালিত হলেও এবার সরকারি ছুটির কারণে ১৯ জুন দিবসটি পালন করছে বাংলাদেশ সরকার। ‘স্বপ্নের ডানায় ভর করি, শিশুশ্রমের শৃঙ্খল ছিঁড়ি—এগিয়ে চলি দৃপ্ত পায়ে, আশার আগুন বুকে জ্বালি’ এই প্রতিপাদ্যে দিবসটি উদ্‌যাপন উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা, র‌্যালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের।

বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ইউনিসেফ ও আইএলও প্রকাশিত যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক প্রচেষ্টার ফলে শিশুশ্রম হ্রাস পেয়েছে। তবে ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে এখনো প্রায় ১৩ কোটি ৮০ লাখ শিশু শ্রমে নিযুক্ত, যার মধ্যে ৫ কোটি ৪০ লাখ শিশু রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের হার ছিল ৩.২ শতাংশ, যা ২০২২ সালে কমে ২.৭ শতাংশে নেমে এসেছে (প্রায় ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু)। তবে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে শ্রমে যুক্ত থাকার হার সামান্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.৯ শতাংশে। ক্ষতিকর শ্রমে যুক্ত থাকার হারও সামান্য বেড়েছে।

ইউনিসেফ বলছে, বিদ্যালয়ে ভর্তির হার বাড়লেও ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম নির্মূলে বাংলাদেশ এখনো সঠিক গতিতে নেই। ইউনিসেফ ও আইএলও মনে করে, শিশুদের অনানুষ্ঠানিক খাতে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হওয়ার প্রবণতা কমাতে হলে জরুরি ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই উদ্যোগ নিতে হবে।

আইএলও বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গুঞ্জন ডালাকোটি শিশুশ্রম নিরসনের অগ্রগতির স্থবিরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।