
প্রতিবেদক: বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শুল্ক ও কর আদায়ে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার রেকর্ড ঘাটতিতে পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের সাময়িক হিসাবে, বিগত অর্থবছরে আদায় হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা, যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯২ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা কম। সবচেয়ে বেশি ঘাটতি হয়েছে আয়কর খাতে—প্রায় ৪২ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা।
ঘাটতির পেছনে মূল দুটি কারণ হিসেবে উঠে এসেছে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান এবং বছরের শেষদিকে এনবিআর কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি ও শাটডাউনের মতো কর্মসূচির কারণে রাজস্ব আদায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। শুধু জুন মাসেই ঘাটতি হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা, যেখানে সাধারণত সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়।
এনবিআর জানায়, বছরজুড়ে আন্দোলন, শ্লথ ব্যবসা, কর ফাঁকি, স্বচ্ছতা ও অটোমেশনের ঘাটতি, কর্মকর্তাদের দক্ষতার অভাব এবং কর জালের সম্প্রসারণ না হওয়ার মতো পুরোনো সমস্যাগুলোও এ ঘাটতির পেছনে ভূমিকা রেখেছে। বছরের শুরুতে আন্দোলনের কারণে কারফিউ, অফিস-ব্যবসা বন্ধ থাকা এবং পরে এনবিআর সংস্কার নিয়ে চলমান বিক্ষোভ এই সংকটকে আরও গভীর করে তোলে।
একপর্যায়ে এনবিআর ও হিসাব মহানিয়ন্ত্রক (সিজিএ) দপ্তরের হিসাবেও পার্থক্য দেখা দেয়। এনবিআরের হিসাবে রাজস্ব আদায় ৩ লাখ ৮২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা হলেও সিজিএর হিসাবে তা ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। পরে উভয় দপ্তরের সমন্বয়ে পরিমাণ নির্ধারণ হয় ৩ লাখ ৬২ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা, যার ফলে এনবিআর নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি থেকে রক্ষা পায়।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। এমন এক সময় এই বিশাল ঘাটতি এনবিআরের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে এখনই সংস্কার ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।