শুল্ক বাধায় পিছিয়ে বাংলাদেশ, এফটিএর মাধ্যমে মালয়েশিয়ার বাজারে প্রবেশের দাবি

প্রতিবেদক: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া বাংলাদেশের অন্যতম বড় শ্রমবাজার। বর্তমানে দেশটিতে কাজ করছেন প্রায় আট লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি। তবে শ্রমবাজার ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক দৃঢ় হলেও বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব আশানুরূপ নয়। মূলত উচ্চ শুল্কের কারণে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে না।

বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক গুনতে হয়। অথচ ভারত, চীন ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) থাকার কারণে শুল্কমুক্ত বা স্বল্প শুল্ক সুবিধায় রপ্তানি করছে। ফলে এফটিএ না থাকায় বাংলাদেশি রপ্তানিকারকেরা তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছেন। ব্যবসায়ীরা তাই দ্রুত এফটিএর দাবি জানিয়েছেন।

বর্তমানে বাংলাদেশ–মালয়েশিয়ার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২৮০ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি মাত্র ২৫–৩০ কোটি ডলার, অর্থাৎ মোট বাণিজ্যের ৮–১০ শতাংশ।

মালয়েশিয়া থেকে আমদানি পাম তেল, ইলেকট্রনিকস ও যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক, সার, নির্মাণসামগ্রী ও খাদ্যপণ্য।

বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি তৈরি পোশাক, কৃষিজাত প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য ও ভোক্তাসামগ্রী। প্রাণ গ্রুপ, স্কয়ার, আকিজ, ওয়ালটন, মুন্নু সিরামিকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এই রপ্তানিতে জড়িত।

মালয়েশিয়ার জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন কোটি। এর বাইরে রয়েছে ২১ লাখের বেশি বিদেশি শ্রমিক, যার মধ্যে প্রায় ৩৮ শতাংশই বাংলাদেশি। ফলে ভোক্তা বাজারে বাংলাদেশের জন্য সুযোগ রয়েছে।

মালয়েশিয়ার হালাল পণ্যের বাজারের আকার প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানি হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ মাত্র ৪–৫ কোটি ডলারের হালাল পণ্য রপ্তানি করে। ব্যবসায়ীদের দাবি, শুল্ক সুবিধা পেলে এই রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব।

প্রাণ গ্রুপ স্থানীয় কোম্পানির মাধ্যমে মসলা, নুডলস, জুস, বিস্কুটসহ নানা খাদ্যপণ্য রপ্তানি করছে। কোম্পানির চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, মালয়েশিয়ায় ব্যবসায়িক চুক্তি না থাকায় আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছি। বিনা শুল্ক সুবিধা পেলে আমাদের রপ্তানি পাঁচ গুণ বাড়তে পারে।

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মাহবুব আলম শাহ বলেন, “ভারত–পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি থাকায় তারা বাজার দখল করছে। ৩০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যের টিকে থাকা কঠিন।

প্রায় এক দশক ধরে মালয়েশিয়ার সঙ্গে এফটিএ নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে, তবে তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়নি। বর্তমানে মালয়েশিয়ার সঙ্গে ১৪টি দেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে।

গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের মালয়েশিয়া সফরের পর আলোচনায় গতি এসেছে। ইতিমধ্যে একটি টার্মস অব রেফারেন্সের খসড়া প্রস্তুত হয়েছে। অনুমোদন পেলে উভয় পক্ষ আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসবে।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মোসাম্মাত শাহানারা মনিকা বলেন, মালয়েশিয়ার বাজারে সম্ভাবনা প্রচুর। তবে শুল্ক ও বিধিনিষেধ সহজীকরণ ছাড়া টিকে থাকা কঠিন। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এফটিএ অপরিহার্য। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে এফটিএ নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হতে পারে।