
প্রতিবেদক: সাম্প্রতিক সময়ে আয়করদাতাদের বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে ‘শূন্য রিটার্ন’ নিয়ে আলোচনা বেড়েছে। অনলাইনে যারা রিটার্ন জমা দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই শূন্য রিটার্ন দিয়েছেন। কিন্তু আয়কর আইনে ‘শূন্য রিটার্ন’ বলতে কিছু নেই। সাধারণত রিটার্ন জমা দেওয়ার পর কর দিতে না হলে সেটিকেই শূন্য রিটার্ন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অনেকের মধ্যে একটি ভুল ধারণা রয়েছে—শূন্য রিটার্ন মানে আয়কর রিটার্ন ফরম খালি রেখে জমা দেওয়া। বাস্তবে তা নয়। শূন্য রিটার্ন মানে রিটার্ন ফরমে সব শূন্য দেখানো নয় বরং আইন অনুযায়ী প্রযোজ্য তথ্য পূরণ করে করযোগ্য আয় না থাকলে রিটার্ন দাখিল করা। উদাহরণস্বরূপ, বার্ষিক আয় সাড়ে তিন লাখ টাকার কম হলে কেউ চাইলে রিটার্ন দিতে পারেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই সীমার নিচে আয় থাকলেও বাধ্যতামূলকভাবে রিটার্ন জমা দিতে হয়।
যাঁদের করযোগ্য আয় নেই, কিন্তু রিটার্ন জমা দেন এবং কোনো কর দেন না, তাঁদের রিটার্নকেই শূন্য রিটার্ন বলে মনে করেন কর কর্মকর্তারা। এতে রাষ্ট্রের কোনো আয়কর প্রাপ্তি হয় না, তবে নাগরিক কর্তব্য পালন হয়।
শূন্য রিটার্ন দেওয়ার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন। প্রথমত, রিটার্ন ফরমের প্রতিটি অংশ যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে করযোগ্য আয়, আয় ও কর হিসাব, কর রেয়াত, সম্পদ ও দায় বিবরণী, পারিবারিক ব্যয় ইত্যাদি। দ্বিতীয়ত, কর রিটার্নের সঙ্গে জীবনযাত্রার ব্যয়ের বিবরণী জমা দিতে হয়, যেখানে পুরো বছরের ঘর খরচ, ভ্রমণ, বাড়িভাড়া, শিক্ষা খরচসহ অন্যান্য খরচ উল্লেখ করতে হয়।
তৃতীয়ত, শূন্য রিটার্ন দিলেও সম্পদ বিবরণী জমা দিতে হবে, বিশেষ করে যাঁরা সরকারি চাকরিজীবী, যাঁদের সম্পদের পরিমাণ ৫০ লাখ টাকার বেশি বা যাঁরা বাড়ি, গাড়ির মালিক। যদি কোনো সম্পদ নিজের নামে থেকেও রিটার্নে তা উল্লেখ না করা হয়, তাহলে তা বড় ভুল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, যা ভবিষ্যতে আইনি জটিলতায় ফেলতে পারে।
বর্তমানে সঞ্চয়পত্র কেনা, ঋণ নেওয়া, বাড়ি বা গাড়ির মালিক হওয়া, অভিজাত ক্লাবে সদস্যপদ পাওয়া, পেশাজীবী সংগঠনে যুক্ত হওয়াসহ ৩৯ ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবা নিতে আয়কর রিটার্নের প্রমাণপত্র দেখাতে হয়। এই সুবিধাগুলো পেতে অনেকেই শূন্য রিটার্ন দিয়ে থাকেন।
সবশেষে, শূন্য রিটার্ন জমা দেওয়া অনেক সময় প্রয়োজনীয় ও উপকারী হতে পারে, তবে জমা দেওয়ার আগে নিজের আর্থিক অবস্থা, আইনগত বাধ্যবাধকতা ও ভবিষ্যতের প্রয়োজন বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। প্রয়োজনে একজন পেশাদার আয়কর পরামর্শকের সাহায্য নেওয়া ভালো।