শেয়ারবাজারে স্থবিরতা, সাত মাস পরও নেই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন

অনলাইন ডেক্স: শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শেয়ারবাজারে ইতিবাচক পরিবর্তনের আশায় ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাস পার হলেও বাজারের অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। বরং আগের অনিয়ম ও দুর্নীতি অব্যাহত থাকায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।

শেয়ারবাজারে বর্তমান স্থবিরতার পেছনে কয়েকটি মূল কারণ চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকরা—অনিয়ম ও দুর্নীতির বিচার এখনও দৃশ্যমান নয়। বিএসইসি শুধুমাত্র জরিমানার মাধ্যমে শেয়ার কারসাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে, যা কারসাজি বন্ধ করতে ব্যর্থ।বাজার সংস্কারের উদ্যোগ ঝুলে আছে। কবে সংস্কার প্রস্তাব আসবে, তা নিয়েই সংশ্লিষ্ট কমিটির অনিশ্চয়তা।

বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দূরত্ব। যেসব প্রতিষ্ঠান বাজার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে, তাদের সঙ্গে বিএসইসির সুসম্পর্ক নেই।দরপতনে বিনিয়োগকারীদের বিপুল পুঁজি হারানো। অনেক বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, আইপিও বাজারও কার্যত স্থবির।

বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নিজেই গভীর সংকটে রয়েছে।

কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগ দাবিতে কিছু কর্মকর্তা টানা চার ঘণ্টা অবরোধ ও কর্মবিরতি পালন করেছেন।এ ঘটনায় ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, যার ফলে অনেকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে অফিসে আসছেন না।কমিশনের অভ্যন্তরে অস্বস্তি ও চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে, যা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

গত সাত মাসে শেয়ারবাজারের সূচক ৭০% দর হারিয়েছে।বিনিয়োগকারীদের ২০-৫০% পর্যন্ত পুঁজি ক্ষয় হয়েছে।গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দৈনিক লেনদেন কমে ৬৭৯ কোটি টাকা থেকে ৫০৫ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

বাজারের অনিয়ম এখনো থামেনি। সাম্প্রতিক সময়ে—এস আলম গ্রুপের ‘এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল’ কোম্পানির শেয়ারদর মাত্র তিন সপ্তাহে আড়াই গুণ বেড়ে ২৫ টাকা ছাড়ায়।বেক্সিমকো গ্রুপের শাইনপুকুর সিরামিক্সের শেয়ার একই সময়ে দ্বিগুণ হয়।দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ারদর দেড় মাসে ৫ গুণ বৃদ্ধি পায়।

এসব অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির পেছনে কারসাজির আশঙ্কা করা হলেও, বর্তমান কমিশন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)-এর তথ্য অনুসারে, গত সাত মাসে—নতুন ৪৫,১১৯টি বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, কিন্তু সক্রিয় অ্যাকাউন্ট বেড়েছে মাত্র ১৮,৯৭৪টি।৩২,৪২৫টি অ্যাকাউন্ট সম্পূর্ণ শেয়ারশূন্য হয়ে গেছে।৬,০০০-এর বেশি অ্যাকাউন্টে কোনো শেয়ার কেনাবেচাই হয়নি।

এ তথ্য ইঙ্গিত করে যে, বিনিয়োগকারীরা বাজারে আস্থা হারিয়ে বিনিয়োগ থেকে সরে আসছেন।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত আত্মগোপনে চলে যান। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার সাবেক ব্যাংকার খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়। কিন্তু নতুন নেতৃত্ব কোনো কার্যকর পরিবর্তন আনতে পারেনি।অংশীজনদের সঙ্গে সংস্থার দূরত্ব বেড়েছে।বিনিয়োগ আস্থা ফিরিয়ে আনার কার্যকর উদ্যোগ নেই।বাজার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হচ্ছে বর্তমান কমিশন।

শেয়ারবাজারের উন্নয়নে বড় ধরনের সংস্কার ও কার্যকর নিয়ন্ত্রণের দাবি দীর্ঘদিনের। তবে, বর্তমান কমিশনের কার্যক্রম এখনো বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে পারেনি। বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকারের সুস্পষ্ট নীতি, দুর্নীতির কঠোর দমন এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। অন্যথায়, বাজারের এ দুরবস্থা আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।