
প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারের বিদ্যমান সমস্যাগুলো সবার জানা—এখন প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও শেয়ারবাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। বুধবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কার্যালয়ে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি ছিল বিএসইসি কার্যালয়ে তাঁর প্রথম সফর।
ড. আনিসুজ্জামান শেয়ারবাজারের সমস্যা এবং উত্তরণের পথ নিয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালকদের সঙ্গে প্রথমে বৈঠক করেন। পরে বাজারের অংশীজন—স্টক এক্সচেঞ্জ, সিডিবিএল, ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক, সম্পদ ব্যবস্থাপক, নিরীক্ষক, রেটিং এজেন্সি ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে বসেন। বৈঠকে বিএসইসির চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ এবং তিন কমিশনারও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, “আপনারা যেসব সমস্যার কথা বলেছেন, সেগুলো আমরা জানি। এখন জানতে চাই, সমাধান কী চান?” তিনি অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে সমস্যার সমাধানে লিখিত প্রস্তাব দিতে আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, গত ১৯ মার্চ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) শেয়ারবাজার উন্নয়নে ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকুল ইসলাম এবং এফআইডির অতিরিক্ত সচিব মো. সাঈদ কুতুব।
বৈঠকে বিএসইসির কর্মকর্তারা কমিটিকে শেয়ারবাজারের কাঠামোগত তথ্য দেন এবং জানান যে, বাজারের বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে—নেগেটিভ ইক্যুইটি ইস্যু, সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানে সুশাসনের অভাব, ভালো মানের আইপিওর ঘাটতি, বিনিয়োগ পণ্যের সংকট, কারসাজির আশঙ্কা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট।
ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজারে লেনদেন কমে যাওয়ায় ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে, উৎসে কর কমানো জরুরি। অপরদিকে সিএসইর চেয়ারম্যান জানান, আগামী এক মাসের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করা হবে, যেখানে স্বর্ণ, তুলা, পাটসহ নির্দিষ্ট পণ্যের কেনাবেচা করা হবে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রূপালী চৌধুরী জানান, ভালো মূল্য এবং কর সুবিধার অভাবে বড় ও খ্যাতিমান কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায় না। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সভাপতি মাজেদা খাতুন বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ে আলোচনা সবসময় সেকেন্ডারি বাজারকেন্দ্রিক হয়, কিন্তু আলোচনার সূচনা হওয়া উচিত প্রাইমারি বাজার তথা আইপিও থেকে।
বৈঠকে অন্য অংশগ্রহণকারীরা লেনদেনে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, নগদ লভ্যাংশ বিতরণে বিলম্ব এবং আইপিওতে ভালো কোম্পানিকে আকৃষ্ট করতে কর রেয়াত সুবিধা বৃদ্ধির সুপারিশ করেন। তৃতীয় পক্ষের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে লভ্যাংশ বিলম্বের সমস্যাও সমাধানে আনার প্রস্তাব উঠে আসে।