
প্রতিবেদিক: শ্রম সংস্কার কমিশন শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের জন্য নির্দিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন এবং ‘শ্রমিক স্বাস্থ্য কার্ড’ চালুর সুপারিশ করেছে। হাসপাতালগুলোতে শ্রমিকদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিনামূল্যে সন্ধ্যাকালীন সেবা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা টোল ফ্রি টেলিমেডিসিন সেবা চালু ও সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যবিমা প্রবর্তনের প্রস্তাবও করা হয়েছে।
শ্রমিকদের জন্য স্বল্পমূল্যে আবাসন নিশ্চিতে ‘শ্রমিক আবাসন তহবিল’ গঠনের পাশাপাশি স্বল্পসুদে গৃহঋণ ও আবাসন ভর্তুকির জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে কমিশন। এ ছাড়া শ্রমিকদের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বল্পসুদে গৃহঋণের সুবিধা এবং শিল্পমালিকদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দিতে ‘শ্রমিক আবাসন নীতি’ প্রণয়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শিল্পাঞ্চল ও শ্রমঘন এলাকায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে সাশ্রয়ী আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নেরও সুপারিশ করা হয়েছে।
শ্রম সংস্কার কমিশন বলেছে, সব শ্রমিকের জন্য সমানভাবে শ্রম আইনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য বিদ্যমান শ্রম আইনে বড় ধরনের সংস্কার বা নতুন সমন্বিত শ্রম আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে শ্রম আইনে ‘মালিক’ শব্দের পরিবর্তে ‘নিয়োগকারী’ শব্দ ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়েছে। রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) ও বাইরের শ্রমিকদের জন্য একক শ্রম আইন প্রণয়নের কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
কমিশন শ্রমিকদের মজুরি তিন বছর পরপর মূল্যায়ন ও পুনর্নির্ধারণ, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মজুরি না দিলে ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিধান এবং মূল্যস্ফীতির ভিত্তিতে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে।
এছাড়া শ্রমিকের চাকরি যেভাবেই শেষ হোক, গ্র্যাচুইটি বা ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার আইনি বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ বাড়ানো এবং চাকরিতে এক বছর পূর্ণ হলেই মৃত্যুঝুঁকি ক্ষতিপূরণের সুবিধা নিশ্চিতের সুপারিশও করা হয়েছে।
শ্রম সংস্কার কমিশন ২০৩০ সালের মধ্যে কর্মে নিয়োজিত হওয়ার বয়স ১৬ বছরে উন্নীত করার প্রস্তাব করেছে। ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর-তরুণদের জন্য দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধির সহায়ক কাজের সুযোগ সৃষ্টি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া প্রতিটি কর্মস্থলে এবং শিল্পাঞ্চলে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে কমিউনিটি-ভিত্তিক ডে-কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠার জন্য আইন সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে।
রাইড শেয়ার চালকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তাঁদের শ্রম অধিকার, ন্যায্য মজুরি ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি কোম্পানির কমিশন হার যৌক্তিকভাবে কমানো, বিশেষ মজুরি কাঠামো নির্ধারণ এবং অ্যাকাউন্ট স্থগিত বা বাতিলের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের প্রস্তাবও করা হয়েছে।
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেন, “আমরা কোনো অবাস্তব সুপারিশ করিনি। সব শ্রমিকের জন্য ন্যূনতম সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়েই কমিশন কাজ করেছে।”
তিনি আরও জানান, শুরুতে কোন সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব এবং কোন মন্ত্রণালয় কীভাবে দায়িত্ব পালন করবে, সে বিষয়ে একটি রূপরেখা দেওয়া হবে। এ ছাড়া বর্তমান সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে শ্রমিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে।