সংকটে বিলাসবহুল হোটেল ব্যবসা

অনলাইন ডেক্স: দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিদেশি পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ ভ্রমণে প্রভাব ফেলেছে, যার ফলে বিলাসবহুল হোটেল ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টার-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা, শেরাটন ঢাকা ও হানসার মালিক প্রতিষ্ঠান ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস-এর প্রধান নির্বাহী শাখাওয়াত হোসেন জানান, বিদেশি অতিথি কমে যাওয়ায় অভিজাত হোটেলগুলোর ব্যবসা চাপে পড়েছে।

বিদেশি পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল এই খাতের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন-আমরা এখন এমন এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি যেখানে কিছুই স্পষ্ট নয়।

জাপান ও কোরিয়ার নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে।মার্কিন ভ্রমণকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করা হয়েছে।ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ভিসা বিধিনিষেধ এখনো বহাল রয়েছে।

হোটেলের আর্থিক পরিস্থিতি তুলে ধরে শাখাওয়াত হোসেন বলেন—২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আয় ছিল ২০ কোটি টাকা, কিন্তু ২০২৪ সালের একই মাসে তা কমে ১৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।অতিথির সংখ্যা শতভাগ থাকলেও, তারা কম খরচ করছেন।আগে অতিথিরা মূলত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক বা প্রধান নির্বাহী ছিলেন, এখন আসছেন মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তা, স্টার্টআপ উদ্যোক্তা ও এনজিও প্রতিনিধি।

আগে হোটেলের অতিথিদের একটি বড় অংশ ভারত, জাপান, কোরিয়া ও ইউরোপীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটক ছিলেন। বর্তমানে তাদের উপস্থিতি প্রায় নেই বললেই চলে।

বাজার প্রতিযোগিতা ও রুম ভাড়ায় পরিবর্তন বিলাসবহুল হোটেলের সংখ্যা বাড়লেও, সেবা নেওয়ার চাহিদা কমেছে।প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হোটেলগুলোর রুম ভাড়া কমাতে হয়েছে।আগে যেখানে এক রাত থাকার খরচ ছিল ২০০ ডলার, এখন তা ১৫০ ডলারে নেমে এসেছে।

রুম খালি থাকলে আমাদের পেটে ভাত জুটবে না। এখন মূল লক্ষ্য মার্কেট শেয়ার ধরে রাখা।—বলেন শাখাওয়াত হোসেন।

আগে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা ছিল ১০%, যা এখন ৮%-এ নেমে এসেছে।পরিচালন ব্যয় অপরিবর্তিত থাকায় কর্মীদের বেতন ও অংশীদারদের লভ্যাংশ দিতে চাপ বাড়ছে।

হোটেল খাতের ৫০% আয় আসে রুম ভাড়া থেকে।৪৫% আয় খাদ্য ও পানীয় বিক্রি থেকে।বাকি ৫% আয় পরিবহন, ফিটনেস ও স্পা সেবা থেকে।

অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসের সঙ্গে ব্যবসায় আগ্রহী থাকলেও, বর্তমানে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ নেই।সৌদি আরব, আমিরাত, জাপান ও চীনের বিনিয়োগকারীরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও ব্যবসায়িক সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতে সংকট তুলে ধরা হয়েছে।

হোটেলের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জার পণ্য ও আসবাবপত্রের ওপর কর ২০০% বেড়েছে (আগে ছিল ২০%)।উন্নতমানের মাংস আমদানি বন্ধ থাকায় সেবায় প্রভাব পড়ছে।মদ আমদানিতে ৬০০% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

আমরা এমন কোনো নীতিনির্ধারক খুঁজে পাই না, যারা সত্যিকার অর্থে এই শিল্পের সংকট বোঝেন। মন্ত্রণালয় পর্যায়ে আমাদের অভিজ্ঞ পেশাজীবী দরকার।—বলেন শাখাওয়াত হোসেন।

তিনি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন—মন্ত্রণালয় পর্যায়ে আন্তর্জাতিকভাবে অভিজ্ঞ ও প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ পেশাজীবী নিয়োগ।স্থানীয় উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি নির্ভরতা কমানো এবং আমদানি পণ্যের ওপর ভ্যাট ও শুল্ক হ্রাস।স্বাধীন পর্যটন কর্তৃপক্ষ গঠন এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি।

তরুণদের এই খাতে ক্যারিয়ার গড়তে উৎসাহিত করে তিনি বলেন—এটি এমন এক মহাসড়ক যেখানে যানবাহনের অভাব। এটি সমৃদ্ধির সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ।”

বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়েছে হোটেল ও পর্যটন খাতে। বিদেশি পর্যটক ও বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় হোটেল ব্যবসায়ীরা সংকটে পড়েছেন। নীতিগত পরিবর্তন, করহ্রাস এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি না হলে পর্যটন ও আতিথেয়তা শিল্প আরও সংকটে পড়তে পারে।