সঞ্চয়পত্রসহ ১০ সেবায় আয়কর রিটার্নের বাধ্যবাধকতা উঠছে

প্রতিবেদক: সঞ্চয়পত্রসহ অন্তত ১০টি সেবায় কর বিভাগের নজরদারি শিথিল হতে যাচ্ছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের জন্য সঞ্চয়পত্র কেনার প্রক্রিয়া সহজ হবে। পাঁচ লাখ টাকা বা তার বেশি মূল্যের সঞ্চয়পত্র কিনতে আর আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থাকছে না। এই সুবিধা আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

এছাড়াও ব্যাংকে ১০ লাখ টাকা বা তার বেশি মেয়াদি আমানত খোলার ক্ষেত্রেও রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। একইভাবে, চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, হিসাববিদ, ইঞ্জিনিয়ার, স্থপতি, সার্ভেয়ারসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যপদ পেতে বা তা বহাল রাখতে আর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণপত্র প্রয়োজন হবে না। তবে এসব সেবার জন্য ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (TIN) থাকা বাধ্যতামূলক থাকবে।

বর্তমানে দেশে ৪৫টি সরকারি-বেসরকারি সেবার ক্ষেত্রে প্যানেল সার্টিফিকেট অব রিটার্ন (PSR) বা আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিল বাধ্যতামূলক। এনবিআর একাধিক বছরে এসব বাধ্যবাধকতা বৃদ্ধি করেছে রিটার্ন জমার পরিমাণ বাড়াতে। কিন্তু এতে কর আদায় তেমন বাড়েনি, বরং সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে বহুগুণে। অনেকেই ‘শূন্য রিটার্ন’ জমা দিতে বাধ্য হয়েছেন, যা প্রকৃত করদাতা বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।

২০২৩ সালের আয়কর আইনে এসব বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রে অনিয়ম ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার জন্য ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।

এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “যেসব জায়গায় পিএসআর দাখিলের প্রয়োজন নেই, আমরা সেখান থেকে ধীরে ধীরে সরে আসতে চাই। শুধুমাত্র টিআইএন জমা দিলেই যেন নাগরিকরা এসব সেবা পেতে পারেন, সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে।” তিনি আরও বলেন, “অতীতের কঠোর বিধান সাধারণ মানুষের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়েছে এবং এনবিআরকে সমালোচনার মুখে ফেলেছে। এ কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসন্ন বাজেটে এসব সংশোধন করে আরও জনবান্ধব করনীতি চালু করতে যাচ্ছে।

এনবিআরের সাবেক সদস্য (করনীতি) ড. সৈয়দ আমিনুল করিম এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “যাঁদের করযোগ্য আয় নেই, তাঁদের জন্য এটি অনেক সুবিধার হবে। বিশেষ করে অনেক বিধবা মহিলার ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র থাকলেও আয় না থাকায় রিটার্ন জমা দেওয়া ছিল এক ধরনের হয়রানি। এই বাধ্যবাধকতা শিথিল হলে স্বল্প আয়ের মানুষজন অনেকটাই স্বস্তি পাবেন।

২০২২–২৩ অর্থবছরে ৩৮টি সেবার জন্য পিএসআর দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়। পরে ২০২৩–২৪ অর্থবছরে আরও ৬টি সেবা যুক্ত করে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৪-এ। বর্তমানে ২০২৪–২৫ অর্থবছরের শেষে তা দাঁড়িয়েছে ৪৫টিতে।

এতে কর সচেতনতা বাড়লেও অনেকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। এনবিআর এবার সেই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে শিথিলতার উদ্যোগ নিচ্ছে।