
প্রতিবেদক: সাধারণত বৃষ্টি নামলেই সবজির দাম বাড়ার কথা বলা হলেও, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) বলছে—বাজারে দাম বৃদ্ধির পেছনে মূলত মধ্যস্বত্বভোগীদের আধিপত্য, তথ্যের অভাব, চাঁদাবাজি ও পরিবহন খরচ বড় বাধা।
গত ২৯ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সবজির বাজার ব্যবস্থাপনায় সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে বিটিটিসি প্রতিবেদন জমা দেয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ২০টির বেশি পাইকারি ও খুচরা বাজার পরিদর্শন করে প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বিটিটিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মধ্যস্বত্বভোগীরা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে সবজি কিনে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে থাকেন। বাজারের চাহিদা ও কৃষি পদ্ধতি সম্পর্কে কৃষকদের যথাযথ তথ্য না থাকায় তারা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।
প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, আমিনবাজার, আব্দুল্লাহপুরসহ প্রবেশপথে ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী’ ও ‘বেসরকারি সংগঠন’ নামে সবজি পরিবহনের গাড়ি থেকে নিয়মিত চাঁদা নেওয়া হয়। তবে চাঁদার পরিমাণ নির্দিষ্ট করা হয়নি। ট্রাকের ফিরতি ভাড়া না নিশ্চিত হলে পরিবহন খরচ বাড়ে।
একটি বগুড়া পাইকারি বিক্রেতা জানান, মহাস্থানগড় থেকে ঢাকার পাইকারি বাজারে যাওয়ার পথে অন্তত সাতটি জায়গায় চাঁদা দিতে হয়। যশোর ও মানিকগঞ্জের ব্যবসায়ীরাও একই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন।
ঢাকার পাইকারি বাজারে ট্রাকপ্রতি ‘বাজার উন্নয়ন ফি’ হিসেবে ১২ থেকে ১৫শ টাকা নেওয়া হয়, যা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল ও অন্যান্যের মধ্যে ভাগ করা হয়।
মধ্যস্বত্বভোগীরা রাতের বেলা গড়ে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করেন, কিন্তু কর দেন না। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে এবং ক্রেতারা বেশি দাম দিয়ে সবজি কিনছেন।
প্রতিবেদনে হিমাগার ও গুদামের সংখ্যা কম হওয়ায় সবজির সঠিক সংরক্ষণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, ফলে কৃষকরা উৎপাদন খরচের নিচে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিটিটিসি সুপারিশ করেছে—মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণ, ন্যায্য দামে পণ্য কেনাবেচার জন্য সরকারি কেন্দ্র স্থাপন, চাঁদাবাজি বন্ধ ও মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা প্রয়োজন। এছাড়া সবজি চাষের এলাকায় হিমাগার নির্মাণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের মিডিয়া সহকারী মহাপরিদর্শক এনামুল হক সাগর বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগ সংশ্লিষ্ট থানায় লিখিতভাবে জমা দিতে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করা হচ্ছে।