
অনলাইন ডেক্স: শেয়ার বা সম্পদ বিক্রি কিংবা ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে নয়, সরকার সুদমুক্ত ঋণের মাধ্যমে বেক্সিমকোর লে-অফ হওয়া কোম্পানিগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ করবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে এ ঋণ দেওয়া হবে। রমজানের আগেই শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের লক্ষ্য নিয়েছে সরকার।
গত বুধবার উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সপ্তম বৈঠক শেষে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, চলতি ফেব্রুয়ারির মধ্যেই শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হবে। তবে পরবর্তীতে জানা যায়, ২৫ বা ২৬ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, ঋণদাতা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক হয়। এরপর অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক মিলে সুদমুক্ত ঋণের মাধ্যমে পাওনা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেন।
শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানান, এ পর্যন্ত ২২৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। তবে আরও ৫৫০ থেকে ৬০০ কোটি টাকার প্রয়োজন, যা একই প্রক্রিয়ায় দেওয়া হবে বলে ভাবা হচ্ছে।
বেক্সিমকোর লে-অফ হওয়া শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের জন্য শুরুতে বেক্সিমকো ফার্মা ও শাইনপুকুর সিরামিকসের শেয়ার ও সম্পদ বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সপ্তম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে উপদেষ্টা পরিষদ।
পরবর্তীতে ব্যাংকগুলোকে পাওনা পরিশোধের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, তবে সেটিও বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে মনে করেন তিন সচিব। ফলে সরকারই সরাসরি অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নেয়।
বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিপুল পরিমাণ ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে—জনতা ব্যাংক ২৩,২৮৫ কোটি টাকা,সোনালী ব্যাংক ১,৪২৪ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ৪২০ কোটি টাক, রূপালী ব্যাংক ৯৮৭ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক ৩১৫ কোটি টাকা, ইউসিবি ৩৩৩ কোটি টাকা, এবি ব্যাংক ৯৩৮ কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংক ৪৯৭ কোটি টাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ৬১ কোটি টাকা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ৯৪ কোটি টাকা, আইএফআইসি ব্যাংক ৭৮ কোটি টাকা, বিআইএফএফএল ৮৭ কোটি টাকা
বেক্সিমকো শিল্প পার্কের আওতায় থাকা ৩১ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২টি সাময়িকভাবে বন্ধ এবং ১৬টি পুরোপুরি বন্ধ। এর বিপরীতে ২৮,৬০৭ কোটি টাকার ব্যাংকঋণ রয়েছে। অথচ বন্ধক রাখা সম্পদের মূল্য মাত্র ৪,৯৩২ কোটি টাকা।
বেক্সিমকোর অন্যতম কর্ণধার সালমান এফ রহমান বর্তমানে কারাবন্দী। তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় ১,০০০ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে ১৭টি মামলা হয়েছে। ১৩ আগস্ট গ্রেপ্তারের পর তাঁর ও তাঁর পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়।
সরকারের এই উদ্যোগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ জরুরি হলেও সরকার বিকল্প উপায়ে কারখানাগুলো সচল রাখার উদ্যোগ নিতে পারত। সরকার সেই পথে না গিয়ে সরাসরি অর্থায়ন করছে, যা পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন।
সরকারের এ পদক্ষেপ শ্রমিক অসন্তোষ এড়াতে নেওয়া হলেও, ভবিষ্যতে এটি যেন নজির হয়ে না দাঁড়ায়, সে বিষয়ে সরকার সচেতন। তবে বিশাল ঋণের বোঝা এবং কারখানাগুলোর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।