
প্রতিবেদক: বর্ষা মৌসুমে সিলেট ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলেও এবার পঞ্জিকাগত বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই বৃষ্টির দফায় দফায় আগমন ঘটেছে। এতে সিলেটে আগাম বর্ষার আমেজ তৈরি হয়েছে। নদ-নদী, হাওর-বিল ও পর্যটনকেন্দ্রগুলো পানিতে টইটম্বুর হয়ে উঠেছে। ঈদের দীর্ঘ ছুটি পেয়ে এই প্রকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা ছুটে এসেছেন সিলেটে।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ফয়েজ হাসান জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটেছে সিলেটে। ঈদের ছুটির দেড় সপ্তাহে অন্তত সাড়ে ৮ লাখ পর্যটক সিলেট বিভাগের চার জেলায় ভ্রমণ করেছেন। এতে পর্যটন, হোটেল-রেস্তোরাঁ, পরিবহন, চা-পাতা, মণিপুরি কাপড়, সাতকরা ও আচারের ব্যবসা মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সিলেট জেলার জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে যেমন—জাফলং, রাতারগুল, ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর এলাকায় উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। জেলার হোটেল-রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁগুলোতে জায়গা পাওয়া ছিল দুষ্কর। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ বলেন, সিলেটের সৌন্দর্য উপভোগে বিপুলসংখ্যক পর্যটক এসেছেন এবং তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, শুধুমাত্র সিলেট জেলায় ঈদের ছুটিতে কমপক্ষে ৫ লাখ পর্যটক এসেছেন এবং এতে অন্তত ১ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে।
সিলেট বিভাগের অন্য তিন জেলায়—মৌলভীবাজারে ২ লাখ, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে দেড় লাখ করে পর্যটক গেছেন বলে স্থানীয় প্রশাসন ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। তবে এসব জেলায় সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান এখনো পাওয়া যায়নি।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় রয়েছে সবচেয়ে বেশি বিলাসবহুল রিসোর্ট ও হোটেল। গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফের জনসংযোগ কর্মকর্তা পলাশ চৌধুরী জানান, ঈদের ৫ দিনের ছুটিতে তাদের ১৩৫টি কক্ষ সম্পূর্ণ বুকড ছিল। এখনো হাউসফুল অবস্থা বিরাজ করছে।
সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এলাকার জনপ্রিয় রেস্তোরাঁগুলোতেও দেখা গেছে তীব্র ভিড়। একদিকে সকালের নাশতা, অন্যদিকে ভ্রমণের প্রস্তুতি—সব মিলিয়ে পর্যটকের পদচারণায় মুখর ছিল এলাকা।
হজরত শাহজালাল (রহ.), হজরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার এবং গোলাপগঞ্জে শ্রীশ্রী চৈতন্য দেবের পৈতৃক ভিটা দেখতে বহু ধর্মপ্রাণ মানুষ সিলেট আসছেন, যা ধর্মীয় পর্যটনের ক্ষেত্রে এই অঞ্চলকে জনপ্রিয় করে তুলেছে।