সাবেক এমপিদের ২৪টি গাড়ি নিলামে, ক্রেতাদের আগ্রহ কম

অনলাইন ডেক্স: চট্টগ্রাম কাস্টমস শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা সাবেক সংসদ সদস্যদের ২৪টি বিলাসবহুল গাড়ি নিলামে তুলেছে। তবে সংরক্ষিত মূল্য বেশি হওয়ায় এবং আগ্রহী ক্রেতার অভাবে বেশিরভাগ দরদাতা (বিডার) এসব গাড়ি কেনায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম সূত্র জানায়, এবারের নিলামে ২৪ জন সাবেক এমপির গাড়ি তোলা হয়েছে, আর বাকি ৭ জনের গাড়ি পরবর্তী নিলামে তোলা হবে। এসব গাড়ির মধ্যে জাপানের ২০২৪ মডেলের ২৬টি ল্যান্ড ক্রুজার, ৫টি টয়োটা হ্যারিয়ার, ২টি টয়োটা র‌্যাভ ফোর, ১টি টয়োটা এস্কোয়ার এবং ১০টি চীনা হেভি ডিউটি সিনো ডাম্প ট্রাক রয়েছে।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কার শেডে সরেজমিনে দেখা যায়, নিলামে অংশগ্রহণকারীরা (বিডার) ছাড়াও সাধারণ দর্শনার্থীরা এসব গাড়ি দেখতে ভিড় করেছেন। বন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা ক্যাটালগসহ আগ্রহীদের প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছেন, যাতে তারা নির্দিষ্ট গাড়িগুলো চিহ্নিত করতে পারেন।

নিলামে অংশ নেওয়া মো. মাসুম নামে এক ব্যক্তি বলেন,
“এবার একদম ফ্রেশ গাড়ি নিলামে উঠেছে, যা বাংলাদেশে আগে কখনও হয়নি। নতুন গাড়ি থাকায় বিডারদের আগ্রহ বেশি। তবে কাস্টমসের সংরক্ষিত মূল্য বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতা কঠিন হবে।”

অন্য এক বিডার নাছির উদ্দিন ছোটন বলেন,আমি দীর্ঘদিন ধরে নিলামে অংশ নিই। এবারের নিলামে নতুন গাড়ি থাকায় আমাদের আগ্রহ ছিল। তবে কাস্টমসের উচ্চমূল্যের কারণে বিডিং কঠিন হয়ে পড়ছে।”

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের নিলাম ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এয়াকুব চৌধুরী জানান,
“এমপিদের গাড়ির সংরক্ষিত মূল্য বেশি হওয়ায় প্রথম বিডে আগ্রহ কম থাকতে পারে। আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায় যুক্ত, তারা ঝুঁকি নিতে চাইছি না।”

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার সহকারী কমিশনার মো. সাকিব হোসেন জানান,
“সাবেক সংসদ সদস্যদের মোট ৩২টি গাড়ি নিলামে তোলার কথা ছিল। তবে ৭টি গাড়ির ঠিকানাগত বা চেসিস নম্বরজনিত জটিলতার কারণে সেগুলো পিছিয়ে গেছে। এছাড়া এক সাবেক সংসদ সদস্য শুল্ক পরিশোধ করে তার গাড়ি নিয়েছেন। আমরা মনে করি, সংরক্ষিত মূল্য যথাযথ, তাই বিডারদের আগ্রহ থাকবে।”

তিনি আরও বলেন,নিলামে অংশগ্রহণকারীরা গাড়ি দেখছেন, তবে বিডিং শুরু হলে প্রকৃত চিত্র বোঝা যাবে। এমপিদের বাকি ৭টি গাড়ি নিলামের জন্য নতুন নোটিশ দেওয়া হয়েছে, যা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নিলামে তোলা হবে।”

নিলামের সংরক্ষিত মূল্য

  • ২৪টি ল্যান্ড ক্রুজার – মোট ৯ কোটি ৬৭ লাখ ৩ হাজার ৮৯৯ টাকা
  • চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা ২টি ল্যান্ড ক্রুজার – ১.৬৩ কোটি ও ১.৩৮ কোটি টাকা
  • ২০২২ সালের ২৪৮৭ সিসি হ্যারিয়ার – ৭৬.১৪ লাখ টাকা
  • ২০২২ সালের ১৯৮৬ সিসি হ্যারিয়ার আইচি – ৮২.০৩ লাখ টাকা
  • ২০২০ সালের ১৯৮৬ সিসি হ্যারিয়ার – ৬১.৬১ লাখ টাকা
  • ২০১৯ সালের ১৯৮৬ সিসি হ্যারিয়ার – ৫৫.৫১ লাখ টাকা
  • ২০১৮ সালের ১৯৮৬ সিসি হ্যারিয়ার – ৫৫.৫২ লাখ টাকা
  • ২০১৯ সালের টয়োটা র‌্যাভ ফোর – ৫৪.৫৫ লাখ টাকা
  • ২০২০ সালের টয়োটা র‌্যাভ ফোর – ৫৬.২২ লাখ টাকা
  • ২০১৯ সালের ১৯৮৬ সিসি টয়োটা এস্কোয়ার – ৩০.৩৮ লাখ টাকা
  • চীনের তৈরি ১০টি হেভি ডিউটি সিনো ডাম্প ট্রাক – ৬টির প্রতিটির মূল্য ৮৫.৩৭ লাখ এবং বাকি ৪টির মূল্য ৮৫.৬৮ লাখ টাকা

সাবেক সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা বিলাসবহুল গাড়িগুলোর নিলামে প্রথম দিকে দরদাতাদের আগ্রহ কম দেখা যাচ্ছে। উচ্চ সংরক্ষিত মূল্য, দ্বৈত ভ্যাট, এবং নিলামের নিয়মের কারণে ক্রেতারা ঝুঁকি নিতে চান না। তবে কাস্টমস কর্মকর্তারা আশাবাদী যে, নিলাম শুরু হলে দরদাতাদের আগ্রহ বাড়তে পারে। এখন দেখার বিষয়, পরবর্তী নিলামে এই গাড়িগুলোর জন্য কী ধরনের প্রতিযোগিতা হয়।