
প্রতিবেদক: উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে ইংলিশ চ্যানেলের মাঝামাঝি অংশে অবস্থিত ছোট্ট দ্বীপ সার্ক। এখানে বাস করছেন ৫০০ জনেরও কম মানুষ। ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের অংশ হলেও সার্কের রয়েছে নিজস্ব সরকার। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই দ্বীপের মানুষের মন ভালো নেই, কারণ তারা বিশ্বের সর্বোচ্চ বিদ্যুতের দাম দিচ্ছেন। সর্বশেষ দুই সপ্তাহে দ্বীপটিতে এক কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১৩ ব্রিটিশ পাউন্ড (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৮৬ টাকা)। তুলনায় বাংলাদেশে বিদ্যুতের গড় দাম ৭ থেকে ১০ টাকা।
সার্কে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে সার্ক ইলেকট্রিসিটি লিমিটেড (এসইএল)। কোম্পানির মালিক অ্যালান উইটনি-প্রাইস জানান, সরকারের সম্ভাব্য হস্তক্ষেপ ও সেই আইনি প্রক্রিয়া মোকাবিলার অতিরিক্ত ব্যয় বিদ্যুতের দাম বাড়ার মূল কারণ। এছাড়া কম জনসংখ্যার কারণে কোম্পানির আর্থিক সুবিধা সীমিত। গত দুই দশকে গ্রিডে তেমন কোনো বিনিয়োগ হয়নি। ফলে দ্বীপটি ডিজেল জেনারেটরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ডিজেল প্রথমে পার্শ্ববর্তী গার্নসিতে আনা হয়, সেখান থেকে সার্কে পৌঁছানো হয়। এভাবে পরিবহন ব্যয়ও বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে।
বিদ্যুৎ কোম্পানি ও স্থানীয় সরকার চিফ প্লিয়াজের মধ্যে টানাপোড়েন নতুন কিছু নয়। ২০১০ সালে প্রথম বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়। ২০১৮ সালে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সার্ক ইলেকট্রিসিটি প্রাইজ কন্ট্রোল কমিশনার বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট ৬৬ পেন্স নির্ধারণ করে। তবে এসইএলের আগের মালিক ডেভিড গর্ডন-ব্রাউন এই দামকে অযৌক্তিক বলে হুমকি দেন বিদ্যুৎ বন্ধ করার। পরবর্তীতে চিফ প্লিয়াজ সিদ্ধান্ত নেয়, সরকার কোম্পানিটি কিনে নেবে। কিন্তু সাত বছর ধরে এই প্রক্রিয়া ঝুলে আছে।
ডেভিড গর্ডন-ব্রাউনের মৃত্যুর পর ২০১৯ সালে কোম্পানির মালিকানা নেন অ্যালান উইটনি-প্রাইস। তিনি মনে করেন, সরকার কোম্পানি কেনায় দেরি করছে এবং এর ফলে তার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। সেই ক্ষতি মেটাতে তিনি বিদ্যুতের দাম বাড়ান।
বিদ্যুতের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি দ্বীপের ব্যবসা ও সাধারণ জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। টাইম অ্যান্ড টাইড নামের একটি রেস্তোরাঁ জানিয়েছে, তাদের বিদ্যুৎ বিল প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। ফলে তারা খোলার সময় কমিয়ে আনার কথা ভাবছে। বাসিন্দারাও ক্ষুব্ধ। কেউ কেউ বলছেন, এত ব্যয়বহুল পরিস্থিতিতে সার্কে বসবাস করা বা বিনিয়োগ করাই কঠিন হয়ে উঠবে।
বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনার শেইন লিঞ্চ জানিয়েছেন, বর্তমান দাম ‘ন্যায্য নয়’। তবে অক্টোবরের আগে দাম কমানো সম্ভব হবে না। সাবেক রাজনীতিবিদ টনি লে লিভরে বলেছেন, তিনি এই বাড়তি দাম দেবেন না এবং অধিকাংশ মানুষও তা মেনে নেবেন না।
একটি গেস্ট হাউসের মালিক হেলেন লে পোয়েডভিন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে প্রায় ৮০ জন অধিবাসীকে নিয়ে সভা করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা টিভি চালাতে পারি না, সবকিছু ভাবতে হয়। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”
চিফ প্লিয়াজ বিদ্যুৎ কোম্পানিটি কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও অগ্রগতি খুব ধীর। তবে ইতোমধ্যে তারা নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর ভিত্তি করে নতুন শক্তি ব্যবস্থার নকশা তৈরি করেছে, যার ব্যয় হবে প্রায় ৮৬ লাখ পাউন্ড। পাশাপাশি একটি আইন পাস করেছে, যাতে প্রয়োজনে জোরপূর্বক কোম্পানিটি অধিগ্রহণ করা যায়।
চিফ প্লিয়াজের কাউন্সেলর মাইক লক বলেছেন, বিদ্যুতের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি দ্বীপের সংবেদনশীল মানুষদের ঝুঁকিতে ফেলেছে এবং ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এটি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।