সার, বিদ্যুৎ ও এলএনজিতে ভর্তুকির চাপ বাড়ছে, ভাঙছে বাজেটের কাঠামো

প্রতিবেদক: সার, বিদ্যুৎ ও এলএনজিতে সরকারের ভর্তুকির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় সংশোধিত বাজেটে এই তিন খাতের ভর্তুকি প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকায়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ রয়েছে ভর্তুকি কমানোর বিষয়ে। সরকারও বাজেট ব্যবস্থাপনার স্বার্থে ভর্তুকি কমাতে চাইলেও কার্যত তা সম্ভব হচ্ছে না, যার ফলে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সারের মূল্য বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে সরকারকে সারে বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বাড়ানোর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, আগের বছরের বকেয়া পরিশোধ ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো। যদিও খরচ কমাতে বিদ্যুৎ খাতে ১০ শতাংশ ব্যয় হ্রাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার ফলে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হতে পারে।

অর্থ বিভাগের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে তিন খাতে ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ ছিল ৬৩ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে হয়েছে ৯৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতের বরাদ্দ ৪০ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৬২ হাজার কোটি, সারে ভর্তুকি ১৭ হাজার কোটি থেকে ২৮ হাজার কোটি, আর এলএনজিতে বরাদ্দ ৬ হাজার কোটি থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। অতিরিক্ত চাহিদা পূরণে চারটি এলএনজি কার্গো আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ২,৪০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত ভর্তুকি দিতে হয়েছে।

সরকার দীর্ঘদিন ধরেই গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সার খাতে ভর্তুকি দিয়ে আসছে যাতে পণ্য ও সেবার মূল্য ভোক্তার জন্য সহনশীল থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ইউরিয়া সারে প্রতি কেজিতে ২১ টাকা, ডিএপিতে ৪৯ টাকা, টিএসপিতে ২৩ টাকা এবং এমওপিতে ৪০ টাকা করে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।

অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে এই তিন খাতে ভর্তুকি ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা, যা ২০২২-২৩ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় এবং ২০২৩-২৪ সালে তা আরও বেড়ে হয় ৫৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে মূল্যবৃদ্ধি ও কিছু ভুল নীতি। সাবেক অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, কেবল দাম বাড়িয়ে নয়, বিদ্যুৎ খাতের অদক্ষতা ও অপচয় রোধ করে ভর্তুকি কমাতে হবে। তিনি খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সারে ভর্তুকি অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দেন। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এলএনজি আমদানির পরিবর্তে দেশীয় গ্যাস উত্তোলনে জোর দিতে হবে। তিনি সরকারকে বিদ্যমান চুক্তিগুলো পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে ভর্তুকি হ্রাসের সুপারিশ করেন।

এদিকে, কৃষি মন্ত্রণালয় সারে অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্য অর্থ বিভাগে আবেদন করেছে। তারা জানিয়েছে, গত অর্থবছরের বকেয়া ও চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত চাহিদা মিলে আরও অর্থ প্রয়োজন। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্যও ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে তারা। অর্থ বিভাগ আপাতত ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে রাজি হয়েছে।