
প্রতিবেদক: ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক কর-পরবর্তী সমন্বিত মুনাফা করেছে ৯০৬ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১৫ কোটি টাকা বা প্রায় ৫৩ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে এ মুনাফা ছিল ৫৯১ কোটি টাকা। মুনাফার এই প্রবৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ড থেকে ব্যাংকটির আয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাওয়া। শুধু প্রথম ছয় মাসেই ট্রেজারি বিল-বন্ড থেকে ব্র্যাক ব্যাংকের আয় বেড়েছে ৮৫২ কোটি টাকা, যা প্রবৃদ্ধির হার হিসেবে প্রায় ৭১ শতাংশ। ২০২৪ সালের পুরো বছরে এই খাত থেকে ব্যাংকটির মোট আয় ছিল ২ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা, আর চলতি বছরের প্রথমার্ধেই এ আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৪ কোটি টাকারও বেশি।
ঋণের সুদ বাবদ আয় এবং আমানতের সুদ বাবদ ব্যয়ের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা গেছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্র্যাক ব্যাংক ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত ঋণ সুদ আয় হয়েছে ৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ১ হাজার ৪৬ কোটি টাকা বা প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে, আমানতের সুদ বাবদ ব্যাংকটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ হাজার ৯২ কোটি টাকা বা ৬১ শতাংশ বেশি।
ব্যাংক খাত বিশ্লেষকরা বলছেন, এক সময় ঋণ ও আমানতের সুদহার একক অঙ্কে সীমাবদ্ধ থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক খাতে তারল্যসংকটের কারণে সেই সীমা তুলে নেওয়া হয়। বর্তমানে সুদহার বাজারভিত্তিক হওয়ায় ঋণের সুদহার ১৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে এবং আমানতের সুদহার ১০ শতাংশের ওপরে পৌঁছেছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর ঋণ থেকে আয় যেমন বেড়েছে, তেমনি আমানতের বিপরীতে ব্যয়ও বেড়েছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ট্রেজারি বিভাগের প্রধান মো. শাহীন ইকবাল জানান, বর্তমানে ব্যাংক খাতে ঋণের চাহিদা কম থাকায় যেসব ব্যাংকের হাতে উদ্বৃত্ত তারল্য আছে, তারা মূলত সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করছে। যার ফলে এই খাত থেকে আয় বাড়ছে। তবে ভবিষ্যতে ঋণের চাহিদা বাড়লে সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ কমে যেতে পারে এবং সেই সঙ্গে এই খাত থেকে আয়ও হ্রাস পাবে।
সব মিলিয়ে চলতি বছরের প্রথমার্ধে ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকায়, যা গত বছরের তুলনায় ৫০২ কোটি টাকা বেশি। এই প্রবৃদ্ধি ব্যাংকটির আয় কাঠামোর পরিবর্তন ও বিনিয়োগ কৌশলের সঠিক প্রয়োগের ফল বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।