সুদের হার নিয়ে ট্রাম্পের সরাসরি আক্রমণ

প্রতিবেদক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ার জেরোম পাওয়েল ও পরিচালনা পর্ষদকে একহাত নিয়েছেন। সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার আরও কমাতে হবে, এবং এ জন্য তিনি ‘অত্যন্ত নিম্ন সুদহার’-এর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

ট্রাম্প পোস্টে ফেডের সমালোচনা করে লেখেন, “পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে ফেডের লজ্জা পাওয়া উচিত।একই সঙ্গে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হারের একটি তালিকাও প্রকাশ করেন, যেখানে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। এই তালিকার নিচে ট্রাম্প নিজ হাতে মন্তব্য করেন, “পাওয়েল যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি করেছেন এবং করে যাচ্ছেন।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট জানান, ট্রাম্প এই তালিকা ফেড বোর্ডে পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাদের ১ শতাংশ অথবা তার চেয়ে কম হারে সুদ দেওয়া উচিত।

জেরোম পাওয়েলকে নিয়ে ট্রাম্পের অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। কখনো তাঁকে ‘বোকা’, কখনো ‘নির্বোধ’ বলেছেন ট্রাম্প, যদিও ২০১৮ সালে তিনিই তাঁকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ট্রাম্পের অভিযোগ, সুদের হার কম না থাকায় সরকারি ঋণের সুদ পরিশোধে বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উল্লেখযোগ্য যে, ইউরোপ ও মেক্সিকোর মতো অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার কমালেও ফেড এখনো সুদ কমায়নি। কর্মকর্তারা জানান, নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে ফেড আরও সময় চায়, কারণ তারা ট্রাম্প আমলে নেওয়া নীতির প্রভাব পর্যালোচনা করছে।

এদিকে, পাওয়েল ট্রাম্পের সমালোচনার জবাব না দিলেও তাঁর অবস্থান স্পষ্ট। গত ২৪ জুন সিনেটে তিনি বলেন, “আমরা রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, বরং মূল্যস্ফীতি ও শ্রমবাজারের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিই।”

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যদি গ্রীষ্মকালেই নতুন চেয়ার মনোনয়ন দেন, তবে তা হবে ফেডের ১১১ বছরের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এ মনোনীত ব্যক্তি কার্যত ‘ছায়া চেয়ারম্যান’ হিসেবে কাজ করবেন, যা বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে, দুর্বল করতে পারে ডলার, বাড়াতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সুদের হার।

ট্রাম্প ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি এমন কাউকে নিয়োগ দেবেন, যিনি সুদহার কমাবেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছেন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট, সাবেক গভর্নর কেভিন ওয়ার্শ, বর্তমান গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালার, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের পরিচালক কেভিন হ্যাসেট, ও ট্রাম্প মনোনীত সাবেক বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস।

ফক্স বিজনেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “কেভিন (ওয়ার্শ) খুব মেধাবী। যদিও তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হবে কি না, এখনই বলতে পারছি না, তবে তিনি জেরোম পাওয়েলের মতো করবেন না।

এদিকে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দ পর্তুগালে এক সম্মেলনে বলেন, জেরোম পাওয়েল সাহসী কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের প্রতীক। আমাদের উচিত তাঁকে করতালি দেওয়া।” মঙ্গলবার ওই সম্মেলনে অংশ নেবেন পাওয়েল।

তাঁর মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালের মে মাসে, কিন্তু এর আগেই রাজনৈতিক চাপ ও পরিবর্তনের সম্ভাবনায় যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।