
প্রতিবেদক: ব্যাংক আমানতের সুদ বাড়ার কারণে অভাবনীয় মুনাফার মুখ দেখেছে জ্বালানি খাতের তিন সরকারি কোম্পানি—পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও যমুনা অয়েল। কোম্পানিগুলোর তৃতীয় ত্রৈমাসিক আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মূল ব্যবসার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি আয় এসেছে ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ থেকে প্রাপ্ত সুদ থেকে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফায় বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটেছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস (জুলাই-মার্চ) সময়কালে তিন কোম্পানি মিলে ব্যাংক আমানতের বিপরীতে মোট ১ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা সুদ আয় করেছে। একই সময়ে এই তিন কোম্পানির সম্মিলিত পরিচালন মুনাফা ছিল মাত্র ২৩৩ কোটি টাকা, অর্থাৎ সুদ থেকে প্রাপ্ত আয় ছিল মূল ব্যবসার আয় অপেক্ষা সোয়া ছয় গুণ বেশি।
সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে যমুনা অয়েল। কোম্পানিটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, পরিচালন মুনাফা মাত্র ৩৪ কোটি টাকা হলেও ব্যাংক থেকে সুদ বাবদ আয় হয়েছে ৫৫৪ কোটি টাকা। এর ফলে কর-পরিশোধ ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে প্রকৃত মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৪৬৫ কোটি টাকায়। যা মূল ব্যবসার তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।
মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০৪ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফার বিপরীতে ৪৬৬ কোটি টাকা সুদ আয় করেছে। এতে কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে ১১৭ কোটি টাকা, এবং সুদ আয় বেড়েছে ১১৪ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, পদ্মা অয়েল পরিচালন মুনাফা করেছে ২৫৫ কোটি টাকা এবং সুদ আয় করেছে ৪২৭ কোটি টাকা। ফলে কোম্পানির মুনাফা ৬২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯৫ কোটি টাকায়। আগের বছরের একই সময়ে এই মুনাফা ছিল ২৪৪ কোটি টাকা।
এই বাড়তি আয়ের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে ব্যাংক আমানতের সুদহার বৃদ্ধিকে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছরের জুন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারভিত্তিক সুদহার চালু করে, যার ফলে ঋণের সুদের পাশাপাশি আমানতের সুদও ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে। বর্তমানে ব্যাংকভেদে আমানতের সুদহার দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশের ওপরে, আর ঋণের সুদ ১৪-১৫ শতাংশের মধ্যে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এখন যেসব কোম্পানির হাতে নগদ অর্থ বেশি এবং ঋণ কম, তারাই সুদ বৃদ্ধির এই সুফল পাচ্ছে। জ্বালানি খাতের সরকারি তিন কোম্পানি তার বড় উদাহরণ। প্রতিদিন তেল বিক্রির বিপরীতে কোম্পানিগুলোর হাতে হাজার হাজার কোটি টাকা জমা হয়, যা ব্যাংকে রেখে তারা সুদ আয় করছে। যত দিন সুদের এই উচ্চ হার থাকবে, তাদের আয়ও বাড়তে থাকবে। তবে সুদ কমে গেলে এই বাড়তি মুনাফা হ্রাস পেতে পারে, যার প্রভাব পড়বে শেয়ারবাজারেও।
ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটির বাণিজ্য অনুষদের অধ্যাপক মোহাম্মদ মুসা বলেন, পরিচালন আয় হলো টেকসই মুনাফার মূল ভিত্তি। সুদ আয় সব সময় এক থাকে না। তাই মূল ব্যবসার আয় না বাড়লে দীর্ঘ মেয়াদে এটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।