
প্রতিবেদক: এ বছর সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে বোরো ধানের ফলন ভালো হলেও কৃষকরা ধান কাটা, মাড়াই এবং শুকানোর কাজে ব্যস্ত থাকলেও তাদের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে—ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ার শঙ্কা। কৃষকরা দাদন ব্যবসায়ী এবং পায়কারদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন, আর তারা কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক কৃষক তাদের চাষাবাদে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে ধান বিক্রি করছেন, যার ফলে তারা বাজারে চাহিদার তুলনায় অনেক কম দামে ধান বিক্রি করছেন।
এ বছর সুনামগঞ্জের ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে, এবং কৃষি বিভাগ দাবি করছে যে, তারা লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন করবেন। তবে, সরকার সুনামগঞ্জের কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কেজি ৩৬ টাকা করে, ১৪৪০ টাকা মণ দরে মোট ১৪ হাজার ৬৪৫ মেট্রিক টন বোরো ধান কেনার উদ্যোগ নিয়েছে, যা এলাকার উৎপাদিত ধানের মাত্র ১ শতাংশ।
এ বিষয়ে হাওর পাড়ের সচেতন মহল বলছেন, সরকার যে পরিমাণ ধান ক্রয় করছে তা খুবই সামান্য, এবং কৃষকদের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার জন্য সরকারি পদক্ষেপ আরও কার্যকর হওয়া উচিত।
কৃষকরা জানান, সুদখোর মহাজন ও ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তারা চাষাবাদ করেন এবং সেই টাকা পরিশোধের জন্য কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন। সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে জটিলতা ও সিন্ডিকেটের সমস্যা রয়েছে, যার ফলে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কৌশলে কম দামে ধান কিনে গুদামে পাঠাচ্ছেন, যা কৃষকদের জন্য আর্থিক সংকট তৈরি করছে।
কৃষকরা দাবি করছেন, সরকার যদি সরাসরি তাদের কাছ থেকে ধান কিনতে পারে এবং সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য রোধ করতে পারে, তাহলে তারা ভালো দাম পাবেন। এছাড়া, সরকারের পক্ষ থেকে আরও বেশী কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হলে তারা উপকৃত হবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী ধান ক্রয়ের কার্যক্রম চলবে এবং সিন্ডিকেট ও ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। তারা আরও বলছেন, কৃষকদের সুবিধার জন্য ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো এবং সংগ্রহের পরিমাণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
এই পরিস্থিতিতে, সুনামগঞ্জের কৃষকরা ধান বিক্রির সঠিক মূল্য ও সরকারি সঠিক সহায়তার জন্য আশাবাদী।