
প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারের চলমান দুরবস্থা কাটিয়ে সূচক খুব দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশাবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি ইতিমধ্যে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বিদেশি ঋণ পরিশোধসহ অর্থনীতিতে একাধিক ইতিবাচক ঘটনা ঘটছে, যার প্রভাব শিগগিরই শেয়ারবাজারেও দেখা যাবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ফারজানা লালারুখ। প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় নিয়োজিত আনিসুজ্জামান জানান, আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য বেশ কিছু প্রণোদনা থাকবে। এর মধ্যে করছাড়ের সুবিধা দিয়ে ভালো কোম্পানিকে বাজারে আনতে উৎসাহিত করা হবে। তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়—এমন কোম্পানির মধ্যে করহারের ব্যবধান বাড়ানো হবে। যদিও নির্দিষ্ট হারে কিছু বলেননি, বিএসইসি ১০ শতাংশ ব্যবধানের প্রস্তাব দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “লোক বদলে নয়, বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিয়েই বাজার স্থিতিশীল করতে চাই।” রাতারাতি কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে সম্ভাব্য প্রভাব যাচাই-বাছাই করেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। বাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের পথ তৈরি করতে ব্যাংকনির্ভরতা কমিয়ে পুঁজিবাজারকেই মূল উৎস করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে সরকারি মালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানি ও ভালো বেসরকারি কোম্পানিকে বাজারে আনতে চায় সরকার।
এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিএসইসির সঙ্গে বাজার উন্নয়ন বিষয়ে জরুরি বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বাজার উন্নয়নে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিএসইসির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সূচকের ধারাবাহিক পতনের কারণ অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অস্বাভাবিক বিক্রির চাপে থাকা শেয়ারগুলোর নজরদারি বাড়ানো হবে।
বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় টক শো, বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিবাচক বার্তা প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিআইসিএম ও বিএএসএম পুঁজিবাজার বিষয়ে শিক্ষণীয় ভিডিও তৈরি করবে।
আইপিওর মাধ্যমে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করতে নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন কোম্পানি, বহুজাতিক কোম্পানি এবং ওষুধ ও টেক্সটাইল খাতের লাভজনক দেশি কোম্পানিকে বাজারে আনতে উৎসাহ দেওয়া হবে। পাশাপাশি নতুন তালিকাভুক্তির জন্য করছাড়সহ নানা প্রণোদনা দেওয়া হবে।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, দেশের আর্থিক খাতের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো হবে। সমন্বিতভাবে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে কাজ করা হবে। আসন্ন বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ওপর করছাড়ের প্রস্তাবও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।