
প্রতিবেদক: ২০২৪ সালে অস্থির অর্থনৈতিক পরিবেশে দেশের ব্যাংকিং খাতে কিছুটা ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ২১টি ব্যাংক, যারা তাদের খেলাপি ঋণের অনুপাত মোট ঋণের পাঁচ শতাংশের নিচে রাখতে সক্ষম হয়েছে। যেখানে গোটা খাতের গড় খেলাপি ঋণ ছিল ১৬.৮ শতাংশ, সেখানে এসব ব্যাংকের সুশাসন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, আগাম সতর্কীকরণ ও ঋণ পুনরুদ্ধারে বিশেষ উদ্যোগ এই সাফল্য এনে দিয়েছে।
বহুজাতিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সিটি ব্যাংক এনএ, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন খেলাপি ঋণ এক শতাংশের নিচে রাখতে পেরেছে। এইচএসবিসি বাংলাদেশ ও ব্যাংক আল-ফালাহর অনুপাত দুই শতাংশের নিচে। এসব ব্যাংক তুলনামূলকভাবে কম ঋণ বিতরণ করলেও ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতিমালা অনুসরণ করে থাকে।
২০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণকারী ছয়টি ব্যাংক—ব্র্যাক ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক—সবগুলোই তিন শতাংশের নিচে খেলাপি ঋণ ধরে রেখেছে। ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার বলেন, তারা দক্ষ ও নিবেদিত কর্মীদের মাধ্যমে ঋণ পুনরুদ্ধার এবং গ্রাহক পর্যবেক্ষণে জোর দিয়েছেন।
এছাড়া উরি ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক ও ঢাকা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার তিন থেকে পাঁচ শতাংশের মধ্যে। ট্রাস্ট ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, হাবিব ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়া—সবগুলোই দশ শতাংশের নিচে খেলাপি ঋণ রাখতে সক্ষম হয়েছে। নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সীমান্ত, কমিউনিটি, মধুমতি, মিডল্যান্ড, মেঘনা, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ও সিটিজেনস ব্যাংকের খেলাপি অনুপাত শূন্য থেকে পাঁচ শতাংশ।
অন্যদিকে বিপরীত চিত্রও রয়েছে। নয়টি ব্যাংকের অনুপাত ১০–২০ শতাংশ এবং ১১টি ব্যাংকের ২০–৪০ শতাংশ। আটটি ব্যাংকের অর্ধেকের বেশি ঋণই খেলাপি হয়ে গেছে। বিশেষ করে ইউনিয়ন ব্যাংক এখন পর্যন্ত ২০২৪ সালের প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি, তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, মার্চ শেষে এ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২৫ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা—যা তাদের মোট ঋণের ৯০ শতাংশ।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি অনুপাত প্রায় ৮৭.৫ শতাংশ। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মো. আবদুল মান্নান জানান, অতীতে ঋণ ভুলভাবে শ্রেণিকরণ করে পারফর্মিং অ্যাসেট দেখানো হয়েছিল, যাতে মুনাফা বেশি দেখিয়ে লভ্যাংশ দেওয়া যায়। নতুন বোর্ড এসব অনিয়ম উন্মোচন করে আমানত সংগ্রহ ও পুনরুদ্ধারে নজর দিয়েছে এবং ২৭০০ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে।
জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২০২৪ সালে ১৭১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৬২ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা—যা তাদের মোট ঋণের ৬২ শতাংশ। ব্যাংকের এমডি মো. মজিবুর রহমান জানান, অনেক ঋণ আগে নিয়মিত দেখানো হয়েছিল, যা এখন শ্রেণিকৃত হয়েছে। তবে ঋণ পুনরুদ্ধার বাড়াতে সম্পদ বিক্রিসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণের অনুপাত যথাক্রমে ৬৭.৫, ৬৪ ও ৬১ শতাংশ। এই ব্যাংকগুলো দীর্ঘদিন ধরে খেলাপি ঋণের চাপে রয়েছে। তবে খেলাপি ঋণ আদায়ে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ব্যাংক উদ্যোগ নিচ্ছে, যা ভবিষ্যতে অবস্থার উন্নতির ইঙ্গিত দিতে পারে।