সোনালী বাংলাদেশ (ইউকে) লিমিটেডে চেয়ারম্যান পরিবর্তন

প্রতিবেদক: যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই নিয়োগ পাওয়ায় অবশেষে যুক্তরাজ্যে অবস্থিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান সোনালী বাংলাদেশ (ইউকে) লিমিটেড–এর চেয়ারম্যান ও অ-নির্বাহী পরিচালক আসাদুল ইসলামকে সরিয়ে দিয়েছে সরকার। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক। আসাদুল ইসলামও একসময় এ বিভাগের সচিব ছিলেন।

অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অনুমোদনের পর গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয় সোনালী বাংলাদেশের (ইউকে) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহকে। চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে। বর্তমানে সোনালী বাংলাদেশের ৫১ শতাংশ শেয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এবং ৪৯ শতাংশ শেয়ার সোনালী ব্যাংকের মালিকানাধীন।

আসাদুল ইসলাম ২০১৮ সালের আগস্টে সচিব পদে যোগ দেন। ২০১৯ সালের আগস্টে তাঁর অবসরোত্তর ছুটি (পিআরএল) শুরুর কথা থাকলেও সরকার তা বাতিল করে আরও দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেয়। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি সোনালী ব্যাংক (ইউকে)–এর চেয়ারম্যান হন। ২০২১ সালের আগস্টে সচিব হিসেবে চাকরি শেষ হওয়ার পর চেয়ারম্যান পদ শূন্য হলেও ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তাঁকে দ্বিতীয় দফায় তিন বছরের জন্য পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৬ সালের ৩১ জানুয়ারি।

তবে স্বাধীন চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর নিয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পরিপত্র অনুসরণ করা হয়নি। আবার যুক্তরাজ্যের করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড অনুযায়ী, সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর পাঁচ বছর না হলে স্বাধীন পরিচালক হওয়া যায় না। এসব কারণে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গত ২২ জুলাই ব্যাখ্যা চায়। সোনালী বাংলাদেশের জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেনি বিভাগটি।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বলছে, অনুমোদন ছাড়া পুনর্নিয়োগ পাওয়া গেছে আসাদুল ইসলামের। আর্থিক খাতে সুশাসন ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তাঁর নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। তবে আসাদুল ইসলাম দাবি করেন, “পরিপত্র কোনো আইন নয়। প্রয়োজনে জারি হয়, আবার পরিবর্তনও হয়। এখানে ব্যাংক কোম্পানি আইনের কোনো লঙ্ঘন হয়নি। সরকারই পুরো পর্ষদকে নিয়োগ দিয়েছিল।”

সোনালী ব্যাংক (ইউকে) ২০০১ সালে কার্যক্রম শুরু করে। ২০১০–১৪ সালে অর্থপাচার প্রতিরোধব্যবস্থায় দুর্বলতার কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে ৩২ লাখ পাউন্ড জরিমানা করে যুক্তরাজ্যের ফিন্যান্সিয়াল কনডাক্ট অথরিটি। এর জেরে ২০১৬ সালে ব্যাংকটির লাইসেন্স স্থগিত হয়। পরে ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠানটি বিলুপ্ত করে নতুন করে গঠন করা হয় সোনালী বাংলাদেশ (ইউকে) ও সোনালী পে (ইউকে) লিমিটেড।

নতুন কাঠামোয় সোনালী বাংলাদেশ লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠছে। ২০২২ সালে এর কর–পূর্ব মুনাফা ছিল ১৫ লাখ পাউন্ড, ২০২৩ সালে ৩১ লাখ পাউন্ড এবং ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৫ লাখ পাউন্ডে। আসাদুল ইসলামের দাবি, “বাংলাদেশের স্বার্থেই এখন ব্যাংকিং লাইসেন্স জরুরি ছিল, আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছিলাম। এই পরিবর্তন প্রক্রিয়াটিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।”