স্টার্টআপের জন্য ১২০০ কোটি টাকার তহবিল, ঋণ মিলবে সহজ শর্তে

প্রতিবেদক: দেশের স্টার্টআপ খাতে অর্থায়নের পথ সহজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নীতিমালা জারি করেছে। এখন থেকে উদ্যোক্তারা ৪ শতাংশ সুদে সর্বোচ্চ ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। এর আগে এই ঋণের সীমা ছিল মাত্র ১ কোটি টাকা। ২১ বছরের বেশি বয়সী যেকোনো উদ্যোক্তা এই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই ঋণ পেতে কোনো ক্রেডিট রেটিংয়ের প্রয়োজন হবে না, ফলে আগের তুলনায় তহবিল পাওয়ার প্রক্রিয়াটি অনেক সহজ হবে।

২০২১ সালের মার্চে বাংলাদেশে স্টার্টআপ অর্থায়নের জন্য দুটি তহবিল গঠন করা হয়। প্রথমটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন তহবিল এবং দ্বিতীয়টি ৫২টি তফসিলি ব্যাংকের নিট মুনাফার ১ শতাংশ অর্থ দিয়ে গঠিত ‘স্টার্টআপ ফান্ড’, যার আকার এখন ৭০০ কোটির মতো। এই দুটি তহবিল মিলিয়ে বর্তমানে বরাদ্দের পরিমাণ ১,২০০ কোটি টাকার বেশি হলেও গত তিন বছরে বিতরণ হয়েছে মাত্র ৩৫ কোটি টাকা। উদ্যোক্তাদের মতে, উপযুক্ত নীতিমালার অভাবে এই অর্থায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল, যা এখন অনেকটাই সহজ হলো।

নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, যেসব স্টার্টআপ বাংলাদেশের নিবন্ধিত এবং যাদের কার্যক্রম শুরু হওয়ার সময় ১২ বছরের মধ্যে, তারা এই তহবিলের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। তবে কোনো বিদ্যমান ব্যবসা পুনর্গঠন বা বিভাজনের মাধ্যমে গঠিত উদ্যোগকে স্টার্টআপ ধরা হবে না। কোনো উদ্যোক্তা বা তাদের প্রতিষ্ঠান যদি ঋণখেলাপি হয়, তারা এই ঋণ সুবিধা পাবেন না। সরকারি-বেসরকারি, বিশ্ববিদ্যালয় বা আন্তর্জাতিক সংস্থা আয়োজিত স্টার্টআপ বাছাই বা পুরস্কারপ্রাপ্ত হলে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় ঋণ পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে উদ্যোগের বয়স অনুযায়ী। দুই বছরের কম বয়সী স্টার্টআপ সর্বোচ্চ ২ কোটি, ২ থেকে ৬ বছর বয়সী ৫ কোটি এবং ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী উদ্যোগ সর্বোচ্চ ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবে। পাশাপাশি সম্ভাবনাময় ও উদ্ভাবনী উদ্যোগে মূলধন বিনিয়োগের সুবিধাও রাখা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ২ কোটি, প্রবৃদ্ধি পর্যায়ে ৫ কোটি এবং উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও বিস্তৃতিযোগ্য উদ্যোগে সর্বোচ্চ ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত মূলধন দেওয়া যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সরকারি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি গঠন করবে, যেখানে ব্যাংকগুলো তাদের স্টার্টআপ তহবিল বিনিয়োগ হিসেবে দিতে পারবে। এ কার্যক্রম তদারক করবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগ। উদ্যোক্তারা বলছেন, নতুন এই নীতিমালা বাস্তবায়নে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া গেলে দেশের স্টার্টআপ খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের আগ্রহ অনেক বাড়বে।