স্টার্টআপে দেশীয় অর্থায়নের নতুন সুযোগ, বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়

প্রতিবেদক: বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশেও সামাজিক ও আর্থিক উন্নয়নে স্টার্টআপ খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে এই খাতের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রারম্ভিক পর্যায়ে দেশীয় বিনিয়োগের অভাব। অধিকাংশ স্টার্টআপ বিদেশি বিনিয়োগের ওপর নির্ভরশীল। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্যপ্রণীত স্টার্টআপ অর্থায়ন নীতিমালা কিছুটা আশাব্যঞ্জক হলেও বাস্তবায়ন ও কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংকগুলোর মুনাফার অংশ থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় একটি স্টার্টআপ ৪ শতাংশ সুদে সর্বোচ্চ ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবে, যেখানে পূর্বে এই সীমা ছিল ১ কোটি টাকা।

এর আগে ২০২১ সালে দুটি পৃথক তহবিল গঠন করা হয়—বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল এবং ৫২টি ব্যাংকের মুনাফার ১ শতাংশ দিয়ে গঠিত নিজস্ব তহবিল। তিন বছরে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা জমা হলেও বিতরণ হয়েছে মাত্র ৩৫ কোটি টাকা।

ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মামুন রশীদ নতুন অর্থায়ন উদ্যোগকে প্রশংসনীয় বলে মন্তব্য করেছেন। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, অর্থ বিতরণে জড়িত সংস্থাগুলোর নির্বাচন ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এই উদ্যোগকে ব্যর্থ করে দিতে পারে।

পাঠাও-এর সিইও ফাহিম আহমেদ মনে করেন, ব্যাংকগুলোকে স্টার্টআপের প্রেক্ষাপট ও তরুণ উদ্যোক্তাদের মনোভাব বোঝার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। চালডাল-এর সিইও ওয়াসিম আলিম বলেন, নতুন নীতিমালার ফলে দেশে ব্যাংক খাতের পক্ষ থেকে স্টার্টআপ অর্থায়নের একটি বাস্তব সম্ভাবনা তৈরি হলো।

নীতিমালায় বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেমন, এখন ২১ বছরের বেশি বয়সী উদ্যোক্তারা আবেদন করতে পারবেন এবং ক্রেডিট রেটিং বাধ্যতামূলক নয়। যেসব স্টার্টআপের বয়স ১২ বছরের কম, তারা তহবিলের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

তবে সেবা এক্সওয়াইজেড-এর সিইও আদনান ইমতিয়াজ মনে করেন, ৮ কোটি টাকার সীমা বড় স্টার্টআপগুলোর জন্য যথেষ্ট নয়। তাঁর মতে, স্টার্টআপের ধরণ ও স্কেল অনুযায়ী, সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়।

নীতিমালার সফলতা নির্ভর করবে বাস্তবায়নের গতির ওপর। কিস্তিতে অর্থ ছাড়, শর্তাবলি, এবং যোগ্যতা যাচাইয়ের প্রক্রিয়া যদি স্বচ্ছ ও নির্দিষ্ট না হয়, তাহলে উদ্যোগটি মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডেকো ইশো, একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান, বলেছে—এই উদ্যোগ সরকার, উদ্যোক্তা ও বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সমন্বয় বাড়াবে ঠিকই, তবে পরিষ্কার নির্দেশনা ও কার্যকর সহায়তা ছাড়া সুফল পাওয়া কঠিন।

শপআপ-এর সহপ্রধান জিয়াউল হক প্রশ্ন তুলেছেন, ব্যাংকগুলোর মুনাফার ১ শতাংশ তহবিলে রাখার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বছরে কতটি স্টার্টআপ অর্থ পাবে, সেই নির্দেশনা অনুপস্থিত। তিনি সতর্ক করেন, অতীতের মতো এবারও ব্যাংকগুলো যোগ্য স্টার্টআপের অভাব দেখিয়ে দায় এড়িয়ে যেতে পারে।

স্টার্টআপ অর্থায়নের নতুন নীতিমালা নিঃসন্দেহে একটি বড় পদক্ষেপ। তবে এর বাস্তবায়নে যদি দ্রুত, স্বচ্ছ ও দক্ষ পদ্ধতি গ্রহণ না করা হয়, তাহলে এটি আগের মতোই সীমিত পরিসরে থেকে যাবে। পরবর্তী এক বছরে যদি অন্তত ২০-৫০টি স্টার্টআপ প্রকৃত অর্থে উপকৃত হয়, তখনই বলা যাবে—এই উদ্যোগ সফল।