
প্রতিবেদক: বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (এসসিবি) বাংলাদেশের গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ড থেকে অভিনব কায়দায় অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। গ্রাহকেরা লেনদেন না করলেও তাঁদের ব্যাংক হিসাব থেকে প্রতি কার্ডে ৫০ হাজার টাকা করে একাধিক মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস)—বিকাশ ও নগদে—অর্থ স্থানান্তর হয়। পরে ওই অর্থ দ্রুত তুলে নেয় প্রতারকেরা।
ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত আগস্টের শেষ সপ্তাহে এসসিবির ৫৪ জন গ্রাহকের কার্ড থেকে মোট প্রায় ২৭ লাখ টাকা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এ ঘটনার পর ব্যাংকটি বিকাশ ও নগদের এমএফএসে কার্ড থেকে টাকা স্থানান্তরের সুবিধা বন্ধ করে দেয়। এক খুদে বার্তায় গ্রাহকদের জানানো হয়, নিরাপত্তার স্বার্থে বর্তমানে এমএফএস অ্যাপগুলোতে ‘অ্যাড মানি’ অপশন সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর এসসিবি বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত শুরু করেছে।
ঘটনা আলোচনায় আসে চলতি মাসের শুরুতে, যখন একাধিক গ্রাহক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। ভুক্তভোগী হাসিন হায়দার লিখেছেন, “আমার স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ভিসা কার্ড থেকে হঠাৎ ৫০ হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে বিকাশ অ্যাকাউন্টে। ফোনে ওটিপি এলেও আমি তা কারও সঙ্গে শেয়ার করিনি। তারপরও ২০ সেকেন্ডের মধ্যে টাকা কেটে নেয়া হয়েছে। আমার বিশ্বাস, এটি ব্যাংকের সিকিউরিটি ইস্যু।”
আরেক গ্রাহক সাদিয়া শারমিন বৃষ্টি জানিয়েছেন, সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে কার্ড ব্যবহার করলেও প্রথমবার তিনি জালিয়াতির শিকার হয়েছেন। তাঁর কার্ড থেকেও ৫০ হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে।
এসসিবির কর্মকর্তারা জানান, একাধিক অভিযোগ পাওয়ার পর স্থানীয় ও বৈশ্বিক প্রযুক্তি দল তদন্ত করেছে। তবে ব্যাংকের প্রযুক্তি ব্যবস্থায় কোনো দুর্বলতা পাওয়া যায়নি। তাঁদের দাবি, যেহেতু অর্থ চুরি হয়েছে এমএফএসের ‘অ্যাড মানি’ অপশনের মাধ্যমে, তাই বিষয়টি পরিষ্কার করা উচিত এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, যে সব মোবাইল নম্বরে টাকা স্থানান্তর হয়েছিল, কয়েক মিনিটের মধ্যে তা নগদে উত্তোলন করা হয় এবং পরে নম্বরগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এটি প্রমাণ করে যে দক্ষ প্রতারক চক্র এতে জড়িত।
এ বিষয়ে এসসিবি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) লুৎফুল হাবিব বলেন, “এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে ৫৪ জন গ্রাহকের অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানানো হয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে এবং দোষীরা শাস্তি পাবে।” তিনি আরও জানান, “এই ঘটনায় ব্যাংকের প্রযুক্তি ব্যবস্থায় কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি। যেহেতু প্রতারণা হয়েছে এমএফএসের ‘অ্যাড মানি’ সুবিধা থেকে, তাই আমরা সাময়িকভাবে এ অপশন বন্ধ করেছি। তদন্ত শেষ হলে এটি পুনরায় চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”