হঠাৎ পদত্যাগ করলেন ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন

প্রতিবেদক: দেশের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি ব্যাংক ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন হঠাৎ পদত্যাগ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার তিনি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন এবং পর্ষদ তা গ্রহণ করে। যদিও তাঁর মেয়াদ ছিল আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত—যখন তাঁর বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ হতো, তবে তার আগেই স্বেচ্ছায় দায়িত্ব ছেড়ে দিলেন তিনি।

সেলিম আর এফ হোসেন শুধু ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি নন, বরং ব্যাংকিং খাতের সর্বোচ্চ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি)-এর চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। সরকারের সঙ্গে ব্যাংক খাতের যোগাযোগ এবং বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী আলোচনায় তাঁর ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

সাবেক ও বর্তমান পাঁচজন ব্যাংক এমডি জানিয়েছেন—নাম প্রকাশ না করার শর্তে—সেলিম আর এফ হোসেন ব্র্যাক ব্যাংককে করপোরেট ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। ব্র্যাক ব্যাংক বর্তমানে দেশের শীর্ষ মুনাফা অর্জনকারী ব্যাংকগুলোর একটি। তাঁদের মতে, এমন একজন অভিজ্ঞ ব্যাংকারের কর্মজীবনের এভাবে অপ্রত্যাশিত সমাপ্তি অত্যন্ত দুঃখজনক।

২০১৫ সালের নভেম্বরে ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন সেলিম আর এফ হোসেন। এর আগে ছয় বছর তিনি আইডিএলসি ফাইন্যান্সের এমডি ছিলেন। ব্র্যাক ব্যাংকে তিনি একাধিকবার মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়েছিলেন এবং তাঁর মেয়াদ ছিল ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত।

তাঁর পদত্যাগের পেছনে কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ উঠে এসেছে। ব্যাংকটির বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন, যার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এর প্রভাব পড়ে ব্যাংকের বিভিন্ন পরিচালন কার্যক্রমে। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্র্যাক ব্যাংকের ফাইল আটকে রাখা ও পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদার করে। একইসঙ্গে, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের এক পরিচালকের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ ও আরেক পরিচালকের নিয়মিত অফিসে বসা নিয়েও তাঁর মধ্যে অসন্তোষ ছিল।

তবে পদত্যাগের বিষয়টি নিয়ে সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, “স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি। কারণ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। আপাতত কোথাও যোগ দিচ্ছি না, কিছুদিন ছুটি কাটাব।” জানা গেছে, তিনি আজ বুধবার কানাডায় যাচ্ছেন ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে অংশ নিতে। কবে ফিরবেন, তা এখনও নির্ধারিত নয়।

ব্র্যাক ব্যাংকের কর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া এক চিঠিতে তিনি লেখেন, “সব ভালো জিনিসেরই শেষ আছে এবং ব্র্যাক ব্যাংকে আমার সময়ও এর ব্যতিক্রম নয়। আজই ব্যাংকে আমার শেষ দিন ধরে নিচ্ছি।” চিঠিতে তিনি আরও লেখেন, “আপনাদের সঙ্গে প্রায় ১০ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল দারুণ। আমরা একসঙ্গে একটি অসাধারণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। আমি আত্মবিশ্বাসী, ব্র্যাক ব্যাংক ভবিষ্যতে আরও বড় হবে এবং আপনারা সবাই উন্নতি করবেন।”

ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেহেরিয়ার এম হাসান কর্মীদের উদ্দেশে আরেকটি চিঠিতে জানিয়েছেন, ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক রেফাত উল্লাহ খানকে ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।