১০ হাজার কোটি টাকার ‘সুবিধাভোগী’ সালমান এফ রহমান, লোকসানে আইএফআইসি ব্যাংক

প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আইএফআইসি ব্যাংক ২০২৪ সালে ১২১ কোটি টাকা নিট লোকসান করেছে। দীর্ঘ প্রায় এক দশক ধরে এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকটিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তীতে বিভিন্ন পরিদর্শনে দেখা গেছে, সালমান এফ রহমান চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে নানা উপায়ে বিপুল অর্থ তোলা হয়েছে, যা ব্যাংকটির আর্থিক ক্ষতির অন্যতম কারণ।

গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ২০২৪ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয় যে, আলোচিত অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেওয়া হবে না। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৬৩ পয়সা, যেখানে আগের বছর ছিল ১ টাকা ৫৬ পয়সা আয়। শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো হয়েছে ৩ টাকা ৪৮ পয়সা, আগের বছর ছিল ৩ টাকা ৩৬ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য ছিল ১৮ টাকা ১৬ পয়সা।

ব্যাংকটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায়, হাইব্রিড পদ্ধতিতে। এ জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ জুলাই।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ২০২৩ সালে ব্যাংকটি নিট মুনাফা করে ৩০০ কোটি টাকা এবং ২০২২ সালে ৩৪৪ কোটি টাকা। অথচ ২০২৪ সালে তা লোকসানে পরিণত হয়। ২০২৩ সালের শেষে ব্যাংকটির মোট ঋণ ছিল ৪৪ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা, যার মধ্যে ১৭ হাজার ১৮২ কোটি টাকা বা ৩৮.৪৯ শতাংশ খেলাপি ঋণ হয়ে গেছে।

২০১৫ সাল থেকে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সালমান এফ রহমান।২০২০ সালে তিনি ব্যাংক থেকে ৪৪০ কোটি টাকা নিলে ও ২০২১ সালে কোনো অর্থ তোলেননি। তবে ২০২২ ও ২০২৩ সালে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করেন। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার সুবিধাভোগী ছিলেন তিনি। এর মধ্যে প্রায় ৬ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকার ঋণ এখনো আটকে আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ২০২২ সালে আইএফআইসি ব্যাংক বেশ কয়েকটি নতুন প্রতিষ্ঠানের নামে আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করে এবং সেই অর্থ দ্রুত নগদে তুলে নেওয়া হয়। পরিদর্শনে সন্দেহজনক লেনদেনের ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও সালমান এফ রহমানের হস্তক্ষেপে বাংলাদেশ ব্যাংকের টিমকে কাজ শেষ না করেই ফিরিয়ে আনা হয়। তখনই ধারণা করা হয়, এই ঋণের সুবিধাভোগী বেক্সিমকো গ্রুপ।

এই ঘটনার পর থেকে ব্যাংকটির ওপর তদারকি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং এর নেতিবাচক প্রভাব ২০২৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।