
প্রতিবেদক: ২০২৪ সালে জীবন বিমা পলিসি বাতিল বা তামাদি হওয়া গ্রাহকের সংখ্যা কিছুটা কমেছে, তবে বিমা খাতে গ্রাহকদের আস্থাহীনতা এখনও এক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। আইডিআরএ (বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মোট ১২ লাখ ৪৯ হাজার গ্রাহক তাদের পলিসি বাতিল করেছেন, যা আগের বছরের তুলনায় ১৯ শতাংশ কম। গত বছর ৩৬টি জীবন বিমা প্রতিষ্ঠানে পলিসির বাতিল সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৪২ হাজার। তবে বিমা দাবির নিষ্পত্তির হার ২০২৪ সালে ৫৭ শতাংশে নেমে এসেছে, যেখানে ২০২৩ সালে তা ছিল ৬৫ শতাংশ। ২০২৪ সালে মোট দাবি ছিল ১৬,৪৮৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৯,৪৭৬ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
আস্থা লাইফ ইন্স্যুরেন্স একমাত্র কোম্পানি, যেটি ২০২৪ সালে একটি পলিসি বাতিল করেনি। অন্যদিকে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে ২ লাখ ৩৭ হাজার পলিসি তামাদি হয়েছে, যা সর্বোচ্চ সংখ্যা। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ডেলটা লাইফ, পপুলার লাইফ, ন্যাশনাল লাইফ ও মেটলাইফ বাংলাদেশ। তবে গোল্ডেন লাইফ প্রতিষ্ঠান ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত ২৯৪টি পলিসি বাতিল করেছে এবং পুরো বছরের তথ্য এখনও জমা দেয়নি।
তামাদি পলিসি হওয়ার পেছনে মূলত গ্রাহকের ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী পলিসির মূল্যবোধ না হওয়া, বিমা এজেন্টদের বিভ্রান্তিকর পরামর্শ, এবং কোম্পানির পক্ষ থেকে সময়মতো তাগাদা না দেওয়াকেই দায়ী করা হচ্ছে। এছাড়া, আইডিআরএ’র মুখপাত্র মো. সোলায়মান বলেন, “অন্য কারণের মধ্যে দুর্নীতি বা আর্থিক অনিয়মের কারণে একটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে গেলে গ্রাহকরা আস্থা হারিয়ে পলিসি বাতিল করে দেন।”
অন্যদিকে, সোনালী লাইফে গত বছর অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার কারণে তামাদি পলিসির সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিষ্ঠানের সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও পাচারের অভিযোগ ওঠে, যার ফলে গ্রাহক ও কর্মীদের মধ্যে আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়। তবে সোনালী লাইফের সিইও জানিয়েছেন যে, তারা এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন।
ডেলটা লাইফের পলিসি বাতিলের সংখ্যা ২০২৪ সালে কমেছে, তবে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী উত্তম কুমার সাধু জানিয়েছেন, বাতিল হওয়া পলিসির বেশিরভাগই ক্ষুদ্র বিমা, এবং অনেক গ্রাহক পরে বকেয়া পরিশোধ করে পলিসি পুনরায় চালু করেছেন। গার্ডিয়ান লাইফ জানায়, ২০২৪ সালে তাদের ১৮,৫৭৯টি পলিসি তামাদি হয়েছে, তবে তারা ১৪,৫০০ পলিসি পুনরায় চালু করেছে। মেটলাইফ বাংলাদেশ ও ন্যাশনাল লাইফের কর্মকর্তারা গ্রাহকদের আর্থিক অক্ষমতার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, বিমা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে গ্রাহকদের সময়মতো প্রিমিয়াম পরিশোধের জন্য তাগাদা দেওয়া দরকার।
আইডিআরএ’র তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ২৬ লাখের বেশি জীবন বিমা পলিসি বাতিল বা তামাদি হয়েছে। ২০০৯ সালে সক্রিয় পলিসির সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১২ লাখ, যা ২০২৩ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৮৫ লাখ ৮৮ হাজারে। এটি বিমা খাতে আস্থার অভাবের প্রমাণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।